Image description

রাজধানীর বাজারে সবজি, মাছ ও মুরগির দামে কোনো স্বস্তি নেই। পূজার মৌসুমে ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৯০-২০০ টাকায় পৌঁছেছে। সবজির বাজারেও উত্তাপ অব্যাহত, কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টির দাপট কমলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য বাজার এখনো দুর্দশার কারণ।

মাছের বাজারে চড়া দাম

মাছের ভরা মৌসুমেও বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দামে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বিক্রেতারা জানান, পূজা উপলক্ষে জেলেদের হাত ঘুরে বড় আকারের ইলিশ ভারতে চলে যাচ্ছে, ফলে ঢাকায় সরবরাহ কম। এক কেজি ওজনের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৭০০-২৮০০ টাকায়, ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ১৬০০ টাকা কেজি। বড় ইলিশ (২-২.৫ কেজি) ৩০০০-৩৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

অন্য মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০-৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) ৭৫০-১২০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ১০০০-১২০০ টাকা কেজি। চাষের মাছের মধ্যে তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০-২৮০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ২৫০-২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কোরাল ৮০০-৯০০ টাকা এবং আইড় ৬০০-৭৫০ টাকা কেজি।

এক ক্রেতা বলেন, “মাছের দাম মৌসুমেও কমেনি। আগের মতোই দামে কিনতে হচ্ছে। ইলিশের দাম তো নাগালের বাইরে।” বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির কারণে ক্রেতার আনাগোনা কম, তবে দাম অপরিবর্তিত।

পোল্ট্রি বাজারে দাম বৃদ্ধি

পোল্ট্রি বাজারেও অস্বস্তি। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৮০-২০০ টাকা কেজি। সোনালী মুরগির দাম কিছুটা কমে ৩১০ টাকা কেজি। এক বিক্রেতা বলেন, “ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে, তবে ক্রেতারা কিনছেন।” ডিমের বাজার স্থিতিশীল, লাল ডিম ১৩০-১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকা ডজন।

সবজির দামে চোখে পানি

বৃষ্টির প্রভাব কমলেও সবজির দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। গোল বেগুন ১০০-১৪০ টাকা, বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা ও কচুর লতি ১০০-১২০ টাকা, ধুন্দল ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙ্গা, পটল ও ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকার আশপাশে। পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা এবং লাউ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের দামও বেশি, লাল শাক ও কলমি শাক ২০ টাকা এবং পুঁইশাক ৪০-৫০ টাকা আঁটি।

ব্যবসায়ীরা জানান, আবাদ কম এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের ফারাকের কারণে সবজির দাম বেশি। এক ক্রেতা বলেন, “মাছ-মাংস কিনতে পারি না, তাই সবজির দিকে ঝুঁকেছি। কিন্তু সেটাও এখন দামে কঠিন।”

চালের বাজারে উচ্চমূল্য

চালের দামও বাড়তি। মিনিকেট চাল ৭২-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫-৯৫ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা কেজি। বাজারের এই উচ্চমূল্যে সীমিত আয়ের ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন।

ক্রেতা-বিক্রেতার অভিযোগ

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ থাকলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। একজন ক্রেতা বলেন, “মাছ, মুরগি বা সবজি—কোনো কিছুই নাগালে নেই। বাজারে গেলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।” বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বাড়ছে। তারা আরও দাবি করেন, পূজার কারণে ইলিশের সরবরাহ কমে গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি এবং মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ন্ত্রণে না আনলে দাম কমার সম্ভাবনা কম। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য বাজার এখনো চ্যালেঞ্জিং।