
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন আট পরিচালক। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন তারা। চিঠিতে অনাস্থা জানানোর কারণও উল্লেখ করেছেন ওই পরিচালকরা।
অনাস্থা জ্ঞাপন করা চিঠিতে স্বাক্ষর করা আট পরিচালক হলেন- নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ফাহিম সিনহা, সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, ইফতেখার রহমান মিঠু, মাহবুব উল আলম, কাজী ইনাম আহমেদ, মনজুর আলম ও সালাউদ্দিন চৌধুরী।
পরিচালকারা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন- ফারুক আহমেদকে ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনয়ন দিয়ে বিসিবি পরিচালক করা হয় এবং পরবর্তীতে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ট পরিচালকবৃন্দ (৯ জনের মধ্যে ৮ জন) অনাস্থা জানাচ্ছেন, ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক ফারুক আহমেদকে দেওয়া পরিচালকের মনোনয়ন যেন বাতিলের আইনানুগ ব্যবস্থা করা হয়।
ফারুকের বিরুদ্ধে আট পরিচালকের আনা অভিযোগ হলো- দায়িত্বপ্রাপ্তির সময় বোর্ডের কমিটিসমূহ পুনর্গঠনের কথা ছিল। ৫ মাস পর তিনি কমিটি পুনর্গঠন করেন। কিন্তু বোর্ড সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও একক আধিপত্যের কারণে পরিচালকরা স্বাভাবিক ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে সভাপতির এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। একের পর এক দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিসিবির অভ্যন্তরে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দেশে ও বাইরে সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে চলেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে- বিভিন্ন পরিচালককে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি স্বাধীন থাকে এবং সভাপতি কমিটির সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমান সভাপতি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন। পরিচালকরা বা কমিটি অনেক সময় সভাপতির সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না। উদাহরণস্বরূপ- কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন পরিচালকরা। যা তারা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জেনেছেন।
চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন- পতিত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপসারণের কথা ছিল। কিন্তু সভাপতি তাদের আরও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বহাল রেখেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিসিবিতে নিয়োগ দিয়েছেন ও অযোগ্যদের পদোন্নতি দিয়ে যোগ্য, সৎ ও কর্মঠদের কোণঠাসা করেছেন। পরিচালকরা দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন-পরিমার্জনের তাগিদ দিলেও কোন উদ্যোগ নেননি।
তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন- বিপিএলে আর্থিক অনিয়ম করা ফ্র্যাঞ্জাইজি দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংসের বিষয়ে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে যাচাইবাছাই না করে, ব্যাংক গ্যারান্টি না নিয়ে নিজের একক সিদ্ধান্তে ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিপিএলে খেলার সুযোগ দিয়েছেন। যার কারণে বিপিএলে পারিশ্রমিক না পাওয়া, বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম হয়েছে। বিপিএলের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্ত কোম্পানির থেকে দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদানের নিয়ম মানেননি সভাপতি। তার বিরুদ্ধে বিসিবির অন্তর্ভূক্ত ক্লাবে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, ক্লাব দখল ও দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পরিচালকরা অভিযোগ করেছেন- বিসিবি সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও একক সিদ্ধান্তকে সমর্থন না দিলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয় এবং বিভিন্ন ফোরামে হেয় করা হয়। এককভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভায় জোর করে পাশ করিয়ে নেন সভাপতি। যা গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। ফারুক আহমেদের বিতর্কিত, স্বেচ্ছাচারি কর্মকাণ্ড, ক্রিকেট অপারেশন্সে হস্তক্ষেপের কারণে ক্রিকেট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৬-৭ অবস্থান থেকে ১০ এ নেমেছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছে।
এছাড়া বিসিবি সভাপতির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে কোন উদ্যোগ না নেওয়া, দুর্নীতি দূরিকরণে উদ্যোগ না নেওয়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটার উঠে আসতে ভূমিকা না রাখার অভিযোগ আনেন।
Comments