
কোরবানির পশু মানুষের মতোই প্রাণী। আমাদের যেমন প্রাণ আছে, আমাদের যেমন দুঃখ-কষ্ট ও আনন্দ-বেদনা আছে! কোরবানির পশু তথা গরু-ছাগল, ভেড়া-মহিষ ইত্যাদিরও কিন্তু দুঃখ-কষ্ট ও আনন্দ-বেদনা রয়েছে। আছে অনুভব, ক্লান্তি ও ব্যাথা। গরু-ছাগলেরও বুদ্ধি আছে কিন্তু জ্ঞান নেই, অমানবিক আচরণে গরু-ছাগল ও পশু-পাখি কাঁদে, কষ্ট পায়।
আমাদের ধর্ম ইসলাম কোনো পশুকে অপ্রয়োজনীয় ও অমানবিক কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং অপ্রয়োজনে কোরবানির পশুর পায়ে রশি বাঁধা, পশুর ঘাড় মুচকানো এবং জবেহ করার পর পশুর নড়াচড়া বন্ধ হওয়ার পূর্বে চামড়া ছাড়ানো বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, জবেহ বা কোরবানির পূর্বে গরু-ছাগলের প্রতি ভালো আচরণ করা এবং পশুর যত্ন নেওয়া আমাদের জন্য জরুরি।
আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতিটি বস্তুর প্রতি অনুগ্রহ করা আবশ্যক করেছেন। সুতরাং তোমরা যখন কাউকে হত্যা করবে উত্তম পন্থায় হত্যা করবে, আর তোমরা যখন কোনো পশুকে জবাই করবে উত্তম পন্থায় জবেহ করবে। তোমরা জবেহ করার পূর্বে ছুরিকে শাণিত করে নেবে এবং যতটুকু সম্ভব পশুকে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।’ -সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫
হাদিস শরিফে আরও এসেছে, ‘তোমাদের কেউ যখন পশু জবেহ করে, সে যেন তার ছুরি ধারালো করে নেয় এবং পশুর সামনে থেকে তা আড়ালে রাখে এবং সে যেন তার জবেহের পশুকে স্বস্তি দেয়।’ -ইবনে মাজাহ: ৩১৭২
মনে রাখতে হবে, আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য সন্তানের জায়গায় পশু কোরবানির বিধান দিয়েছেন, বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে কোরবানির পশুকে যত্ন করা দরকার।
দেখবেন, কোরবানির পশুকে আদর করলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে না। অবুঝ শিশুদের সঙ্গে মানুষ যেভাবে কথা বলো, কোরবানির পশুর সঙ্গেও সেভাবে কথা বললে, সেও আপনার মনের কথা বুঝবে অথবা বুঝার চেষ্টা করবে এবং চোখের চাহনি বা মাথা নেড়ে কথার উত্তর দেবে।
মানুষের সঙ্গে পশুদের ভালোবাসা আদিম, আদিমতম। প্রিয় মনিবের জন্য পশুর আত্মাহুতি আর প্রিয় পশুর জন্য মানুষের মন ভাঙা আর অশ্রুসিক্ত হওয়া নতুন নয়। প্রতিবছর কোরবানিতে অসংখ্য ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়- পশু বিক্রির পর বিক্রেতা কান্না করছেন। পোষা পশুকে অন্যের কাছে তুলে দিতে বুক ফেঁটে যাচ্ছে।
পোষা বা প্রিয় প্রাণীর ওপর মানুষের মমত্ববোধের প্রায় সব কাহিনিই মানবিক। আর এ ধরনের দৃশ্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে কোরবানি ঈদ এলে। প্রতিবছর এ দেশে লাখো পশু কোরবানি হয়। আর এর অধিকাংশ পশুই তার মালিকের প্রিয় বনে যায়। নিয়মিত দেখভাল করার কারণে একসময় অবলা এই প্রাণীগুলোর প্রতি মানুষের এক অকৃত্রিম মমত্ববোধ জন্ম নেয়।
তাই শেষ অনুরোধ, পশুর সঙ্গে ‘পশুর’ মতো আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন। পশু বিরক্ত হয় এমন কাজ করবেন না।
Comments