Image description

পরকালে মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন প্রতিটি মুমিনের পরম আকাঙ্ক্ষা। এই পথে চলতে মহান আল্লাহর নির্দেশনার পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘হে নবী আপনি তাদের বলে দিন- যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)।

এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী মুমিনের জন্য একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। পরকালের অনন্ত জীবনে সফলতা লাভের জন্য এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৭)।

বিপদ-আপদও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। এমতাবস্থায় ধৈর্য ধারণের পাশাপাশি আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে অবিচল থাকতে হবে। আনাস (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা যখন তার কোনো বান্দার কল্যাণ করতে চান, তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোনো বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান, তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তারপর কেয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন।’ (তিরমিজী, হাদিস: ২৩৯৬)।

পরকালে সফলকাম হতে নবীজি (সা.) বিভিন্ন হাদিসে উম্মতদের জন্য নানা আদেশ ও নিষেধের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথও বাতলে দিয়েছেন। তেমনই এক হাদিসে কেয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তিন শ্রেণীর মানুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ এই তিন শ্রেণীর মানুষ হলো:

১. কৃপণ: যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আছে, অথচ সে কোনো মুসাফিরকে তা দিতে অস্বীকার করে। সংকটকালে সাহায্যপ্রার্থীকে সহায়তা না করা আল্লাহর অপছন্দনীয়।

২. দুনিয়ালোভী শাসক: যে ব্যক্তি শুধুমাত্র পার্থিব স্বার্থের জন্য কোনো ইমাম বা নেতার হাতে আনুগত্যের শপথ করে। যদি ইমাম তাকে কোনো জাগতিক সুবিধা দেন, তবে সে সন্তুষ্ট হয়, আর যদি না দেন তবে অসন্তুষ্ট হয়। নেতৃত্ব বা আনুগত্যকে ব্যক্তিগত লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা আল্লাহ তাআলার কাছে ঘৃণ্য।

৩. মিথ্যা শপথকারী বিক্রেতা: যে ব্যক্তি আসরের নামাজের পর তার পণ্য বিক্রির জন্য উপস্থাপন করে এবং মিথ্যা শপথ করে বলে যে, আল্লাহর কসম, এই পণ্যের এত মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছিল (কিন্তু সে বিক্রি করেনি)। এরপর সরল বিশ্বাসে কোনো ক্রেতা সেই মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে পণ্যটি কিনে নেয়।

এই প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকার ও নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, তারা আখিরাতের কোনো অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইমরান, আয়াত: ৭৭)।