
বিপ্লব কি ছেলের হাতের মোয়া, যে ডাক দিলেই হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা মারাত্মকভাবে আলোচিত হচ্ছে। যারা এই সময়টিতে বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড, গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড রূপে এই সমাজে বিচরণ করছেন তারা বুদ্ধিজীবী। তাদের এত বুদ্ধি যে বুদ্ধির যন্ত্রণায় অনেকের দাঁত পড়ে গেছে।
অনেকের চুল পেকে একদম সাদা হয়ে গেছে। তারা সারাদিন এত চিন্তা করেন চিন্তার যন্ত্রণায় তাদের কপালের বেশিরভাগ চুল নেই। এবং অনেকের দেশ জাতির প্রতি তাদের যে প্রেম, ভালোবাসা, উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা এর কারণে সারাক্ষণ তাদের মেজাজ গরম থাকে।’
রনি বলেন, ‘এরকম অসংখ্য লোক গত আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পর তারা সেই বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে এভাবে সামনে চলে এসেছেন।
মনে হয় যেন তারা যুগের পর যুগ ধরে এই আন্দোলন করেছেন। শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য তারা সেই ২০০৯ সাল থেকে পরিশ্রম করছেন। এ রকম অনেক লোক এখন আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছি।’
‘এ রকম একটি অবস্থাতে গত সাত মাসে তারা যে সকল বিতর্ক আমাদের এই সমাজে তৈরি করেছে, সেই বিতর্কের ফলে সামাজিক যে সংহতি সেটা এটা নষ্ট হয়ে গেছে।
যারা এই বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছাত্র, সেই ছাত্রদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেছে। তাদের দুর্মতি দুর্বুদ্ধি এবং অতি পাণ্ডিত্যের কবলে পড়ে কোমলমতি বিপ্লবীরা, কোমলমতি আন্দোলনকারীরা গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক এবং নায়িকারা অবাক বিস্ময়ে একটার পর একটা ভুল করে গেছে। এবং এখন পর্যন্ত সেই ভুল করে চলেছে।’
উদাহরণ হিসেবে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘দেখা গেল যে একজন লোক আমাকে বিশ্বাস করছেন। আমার কথা অনুসরণ করছেন।
তো তাকে আমি এমন একটা তথ্য দিলাম বা এমন একটা কাজ করতে দিলাম, আমি জানি যে এই কাজটি করলে তার সর্বনাশ ঘটবে বা সেটা পারবে না। কিন্তু আমি নিজে সেই কাজটি করতে পারিনি। আমি আমার এই অবস্থান থেকে যেটি পারিনি সেটি আমার সন্তানের বয়সের, আমার নাতির বয়সের একটা লোক পারবে, এটা কি করে সম্ভব? সেই ঘটনাটাই এই গত সাত-আট মাসে এত বেশি অহরহ ঘটেছে যে এই বিপ্লবীদেরকে যে যার মতো ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। এ কারণে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়ে বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানের যে বীজ সেটি নষ্ট হয়ে গেছে, পুরো জিনিসগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেছে।’
‘এ রকম অসংখ্য তর্ক-বিতর্ক তৈরি হয়ে গেছে এবং সে বিতর্কের মাঝে বিপ্লবের যে মূল স্পিরিট সেটি হারিয়ে গেছে। এবং এগুলো হারানোর ফলে এখন আবার তারাই বলছে দ্বিতীয় বিপ্লব দরকার। একটা বিপ্লব হতে বহু বছর সময় লাগে। একটা গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে ১৯৮৯ সালে। সেই গণ-অভ্যুত্থানের পরে ১৯৯১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন সময় সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থান তো এরশাদের বিরুদ্ধে যেটা করেছিলাম সে একই মানুষ আমাদের সমাজে আছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান তো হয়নি। আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ৩৫ বছর।’
‘এখন আবার এখন বলা হচ্ছে যে, আমাদেরকে দ্বিতীয় বিপ্লব করতে হবে। দ্বিতীয় বিপ্লব তো মুরগির ডিম না যে আপনি টাস করে পেড়ে দিলেন অথবা এটা এমন কিছু ম্যাজিক না। এটা ১৮ কোটি মানুষের মন এবং মস্তিষ্কে এই জিনিসটি তৈরি করতে হবে, হৃদয় দিয়ে তৈরি করতে হবে, তাদের শরীরকে উজ্জীবিত করতে হবে এবং এরকম একটা বিপ্লব করতে কখনো কখনো ৩০, ৩৫, ৪০, ৫০ অথবা ১০০ বছরও লেগে যায়।’
‘এখন আমরা এত ত্যাগের মাধ্যমে বিপ্লব অর্জন করলাম, সেটাকে আমরা নিজেরা সর্বনাশ করে দিয়ে এখন আবার আবার দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা বলছি। এটি রীতিমতো আত্মহত্যার মতো ঘটনা। তাই এগুলো বাদ দিয়ে এখন এটাকে যদি আমরা রিভাইভ করতে পারি তাহলে আমাদের বাঁচা সম্ভব, অন্যথায় এই বিপ্লবের সঙ্গে যারা জড়িত কারোরই পিঠের চামড়া থাকবে না।’
Comments