Image description

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ঘরে-বাইরে সংকট সামলাতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। একদিকে যেমন নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রেখে সুষ্ঠু ও সব মহলে গ্রহণযোগ্য করতে চায় সরকার, অন্যদিকে সরকারে থাকা দলটিরই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের আত্মীয়রাও প্রার্থী হয়েছেন বিভিন্ন উপজেলায়। যা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে দলটির হাইকমান্ড। 

যদিও ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের কাছে আত্মীয়দের প্রার্থী না করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে এ নিয়েও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে চলছে রেষারেষি, বাড়ছে। উপজেলা নির্বাচনে দল ও সরকার এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করা এখন আওয়ামী লীগের জন্য বড় পরীক্ষা। 

দেশে মোট ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে চার ধাপে ৪৭৫ উপজেলায় ভোট হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৪৮ উপজেলায় আগামী ৮ মে নির্বাচন হবে। এই ধাপের নির্বাচনের প্রচারণা চলছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন এক হাজার ৬৯৩ জন প্রার্থী। এই ধাপে বান্দরবানের দুই উপজেলার ভোট বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ১৪ জন মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ এখনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। দ্বিতীয় ধাপের ১৬১ উপজেলায়ও প্রায় একই অবস্থা। এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি উপজেলায় আত্মীয় প্রার্থী হওয়ায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর দরখাস্ত জমা পড়েছে। কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে কেন স্বজনদের প্রার্থী করতে চায় না আওয়ামী লীগ? এবারও তো মাঠে বিএনপি নেই।

কেন্দ্রে ভোটার টানতে ও নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অংশগ্রহণ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রথম ধাপের নির্বাচনে ২৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ওই সব জায়গায় একক প্রার্থী হওয়ায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের বাস্তবতা আলাদা। জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসন নিয়ে ভাবতে হয়। যারা নির্বাচনে অংশ নেন, তাদের বেশির ভাগেরই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ তুলনামূলক বেশি থাকে। তাই ওইসব প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।

আওয়ামী লীগ চায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন: মূলত নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে ভোটের মাঠে যেমন প্রার্থী বেশি দরকার, তেমনি নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষ করা দরকার মনে করছে তারা। ৪৭৫ উপজেলার মধ্যে মন্ত্রী-এমপির প্রার্থী খুব অল্প হবে বলে ধারণা করছে আওয়ামী লীগ। তাই মাঠপর্যায়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রেখেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা সম্ভব হবে। মন্ত্রী-এমপির বাইরেও স্থানীয় পর্যায়ে কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের আধিপত্য রয়েছে। সেটাও যেন কোনোভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত না করে, সেদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এতে প্রভাবশালী নেতারা যদি মনক্ষুন্ন হন, তাতেও পরোয়া করবে না দল। 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি ভোটে না এলেও নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। তারা সব সময় জনগণের বিপক্ষে। তাদের নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের কৌশলের কারণে আমাদের কিছু প্রভাবশালী নেতা কষ্ট পেতে পারেন।’

কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আজ, এজেন্ডায় নেই তালিকা উপস্থাপন: মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হতে যাচ্ছে। কিন্তু বৈঠকে দলীয় নির্দেশ না মেনে ভোটে থাকা প্রার্থীদের তালিকা উপস্থাপন এজেন্ডায় নেই। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তালিকা আমাদের কাছে আছে। কিন্তু মিটিংয়ে সেই তালিকা উপস্থাপনের কোনো এজেন্ডা নেই। মিটিংয়ে যদি আলোচনা ওঠে, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যদি তালিকা চান, তাহলে আমরা সেটি উপস্থাপন করব। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি সবাই মেনে  নেবেন।’ তবে এজেন্ডা ছাড়াই এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

একক প্রার্থী নিয়ে ভাবনা নেই: এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ২৫ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। একক প্রার্থী হওয়ায় ওসব জায়গায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। একদিকে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চাইলেও একক প্রার্থীর পরিমাণ কম হওয়ায় এ নিয়ে দলের তেমন ভাবনা নেই। 

এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘কোথাও একক প্রার্থী হয়ে গেলে আমাদের তো কিছু করার নেই। দলের কাউকে জোর করে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে কি না বা প্রার্থী হতে বাধা দেয়া হচ্ছে কি না, এমন ঘটনা থাকলে দল থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেমন ধরেন, একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পলকের (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক) শ্যালক শেষ মুহূর্তে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেখানে তো এখন একক প্রার্থী হয়ে গেছেন। এতে আমাদের কী করার আছে।’

দুই উপজেলায় দুজনকে প্রার্থী ঘোষণা: বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ছয় মাস ধরে তারা গণসংযোগ করেছেন। এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ রাতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুই উপজেলায় দুজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এতে প্রচারণায় থাকা অন্য নেতারা হঠাৎ নিশ্চুপ বনে গেছেন। বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বাসভবনে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গৌরনদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান ও আগৈলঝাড়ার এমপির ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এমপির বাসভবনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে রাতে দুজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ দুজনকে মনোনীত করেছেন, এ জন্য তিনি প্রার্থী হবেন না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গৌরনদী পৌরসভায় মেয়র পদে হাসনাতের মেজো ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ নির্বাচন করবেন। তাই বর্তমান মেয়র হারিছুর রহমানকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হাসনাত নির্দেশ দিয়েছেন।


মানবকণ্ঠ/এফআই