Image description

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় গ্রেফতার হেফাজতে ইসলামের ৯৯ ভাগ নেতাই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ওই ঘটনায় এখন আর ১০ জনের মতো নেতা কারাগারে আছেন। তারমধ্যে মাওলানা মামুনুল হক অন্যতম। 

হেফাজত নেতারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে তাদের সখ্য বাড়ায় পর্যায়ক্রমে সবাই মুক্তি পাচ্ছেন। বাকিরাও দ্রুত মুক্তি পাবেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মাদরাসা-মসজিদে বেশি সময় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘরে থেকে ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য হেফাজতের নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যদিও নির্বাচন ঘিরে তাদের একটি প্রভাব রয়েছে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। 

কওমি মাদরাসাভিত্তিক এই সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে এখনও ২৫০টির মতো মামলা তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৩৪টি মামলা হয়। এসব মামলার অনেকগুলো এখনও তদন্তাধীন।

হেফাজতের দায়িত্বশীলরা জানান, নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের ঘটনায় তাদের ১ হাজারেরও কিছু বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তাদের মধ্য থেকে বেশিরভাগই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে এখনও কারাগারে আছেন সংগঠনের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হুসেন কাসেমী, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি নুর হুসাইন নুরানী, আবদুল মান্নান, দিদারুল আলম, অনিক দত্ত, মো. সোহাগ ও আজিজুল হক। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে মাওলানা কামরুদ্দিন ও মিযানুর রহমান কারামুক্ত হয়েছেন।

হেফাজতের সাবেক নেতা এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঠিক কতটি মামলা আছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। আর হেফাজতে ইসলামও তার মুক্তির বিষয়ে ধীরে চলো নীতিতে আছে। এ বিষয়ে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী সময়ের আলোকে বলেন, আমরা আলাদাভাবে কারোর বিষয়ে বলছি না। সবার মুক্তির জন্যই আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। মামুনুল হকের মামলা কত তা আমাদের চেয়ে তার দল খেলাফত মজলিস ভালো বলতে পারবে। মামুনুল হকের মামলা তার পরিবারের লোকজন দেখছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে যাচ্ছি। এর বাইরে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো বলেই সবাই মুক্তি পাচ্ছে। আর রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। 

পুলিশ বলছে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা আছে অন্তত ৫০টি। কিন্তু খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক হেফাজত নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন জানান মামলা আছে ৪০টি। এরমধ্যে ১২টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। তাকে মুক্তি পেতে হলে আরও ২৮ মামলায় জামিন পেতে হবে। তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলার বিচার চলছে। 

আর মামুনুল হকের আইনজীবী জয়নুল আবেদিন মেসবাহ জানান, মামুনুল হকের ৩৫টি মামলায় তিনি আইনি সহায়তা দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৬টি মামলায় চার্জশিট হয়েছে। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একটি ধর্ষণ মামলা, খুলনায় একটি বিস্ফোরক মামলা এবং ঢাকায় একটি হত্যা মামলায় বিচার চলছে। ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়। এখনও তিনি কারাগারে আছেন। গ্রেফতারের সময় তিনি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব। পরে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হলে তাকে হেফাজতের আর কোনো কমিটিতে রাখা হয়নি।

অন্যদিকে গত ১৩ এপ্রিল হাটহাজারী মাদরাসায় গিয়ে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী কারাবন্দি হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তির কথা বলেছেন। সে সঙ্গে তাদের মাদরাসা ও মসজিদে ব্যস্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সড়কে সক্রিয় না হয়ে ঘরে ধর্মকর্ম চর্চার অনুরোধ জানিয়েছেন। 

জবাবে হেফাজত নেতারাও বলেছেন তারা অরাজনৈতিক সংগঠন। নির্বাচন কিংবা রাজনীতি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। হেফাজত যে তালিকা দিয়েছে, সে তালিকা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে নেতাকর্মীরা মুক্তি পাচ্ছেন।

ওই বৈঠকে ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালক ও হেফাজত নেতা মুফতি জসিম উদ্দিন। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমরা আসলে মাদরাসার নানা কাজে ব্যস্ত। এখন শাওয়াল মাস শিক্ষার্থী ভর্তির মৌসুম চলছে। সংগঠন নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, বর্তমান কমিটি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। তারা হয়তো ভাবছে সরকার তাদের কথায় সবাইকে মুক্তি দিয়ে দেবে। কিন্তু মামুনুল হককে তো এখনও মুক্তি দিচ্ছে না। সরকার আসলে মামুনুল হককে এখনও ঝুঁকি মনে করছে। আর হেফাজত তো রমজানে আল্টিমেটাম দিয়েছিল তার মুক্তির বিষয়ে। কিন্তু এখন কোনো উদ্যোগ দেখছি না। আর তারা মনে হচ্ছে না আর কখনো কোনো ইস্যুতে সড়কে সক্রিয় হবে। কিছু প্রেস রিলিজ আর ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সরকারও এতে খুশি। 

তিনি বলেন, যারা কারামুক্ত হয়েছেন তারা এখন সেই অর্থে ওয়াজ মাহফিলসহ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় নন। তাদের জনপ্রিয়তা কমে গেছে বিষয়টি এ রকম নয়। তবে তারা নানা কারণে নিবৃত আছেন।