Image description

আমাদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত। এদেশের ওপর দিয়ে চলে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। এছাড়াও দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অজস্র নদী, খাল,পুকুর, হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল। ফলে জল-জংলার এই জনপদে ভরা গ্রীষ্মেও তাপমাত্রা থাকে সহনীয়। কিন্তু হালে তাপমাত্রা অসহনীয়ভাবে বেড়েছে। তাপপ্রবাহ ক্রমশ প্রাণসংহারী হয়ে উঠছে। 

জলবায়ু ও পরিবেশ গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন ছাড়াও শহরে দ্রুত দালানকোঠাসহ সব ধরনের ভৌত অবকাঠামো ও জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। শুধু বাড়ছে বললে হবে না, এখন তাপপ্রবাহে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থেকে সোমবার (২৯ এপ্রিল) পর্যন্ত তাপপ্রবাহে অন্তত ৪০ জন মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। 

চলতি মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ চরম রূপ নিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে মানুষ ও পশু-পাখির ওপর। তীব্র তাপপ্রবাহে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্রয়লার মুরগি ও গরু মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন খামারিরা। পাশাপাশি মুরগি ও গরুর ওজন কমে যাওয়া এবং ডিম ও দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। 

গত বৃহস্পতিবার প্রান্তিক পোলট্রি খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ঈদুল ফিতরের পর ১০-১২ দিনে দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল ব্রয়লার মুরগি। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার মতো। এরপর গত দুদিনে এ মৃত্যু আরো বেড়েছে বলে জানান খামারিরা। 

এদিকে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) হিসাবে গত কয়েক দিনে তীব্র গরম, লোডশেডিং ও বাদলা রোগে দুই হাজার গরু মারা গেছে। এক হাজারের বেশি গাভী সাত-আট মাসে গর্ভপাত করেছে। গরু সুস্থ রাখতে খামারগুলোয় খরচ বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। এবার কোরবানি ঘিরে সারা দেশে ১ কোটি ২০ লাখের মতো পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে গরমে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৯৯ শতাংশের বেশি পশুর ওজন কমে গেছে। 

অন্যদিকে দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে গত সাতদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক গরু মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে খামারের গরু। 

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুদিন পর গতকাল চুয়াডাঙ্গায় কমেছে তাপ। আর খুলনা বিভাগের বাকি জেলাগুলো এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। 

আমরা মনেকরি আমাদের আবহাওয়া সহনশীল পরিবেশ কিভাবে তৈরি করা যায়, সেই পরামর্শ খামারিদের দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের পশু পালন মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ  নেওয়ার বিকল্প নেই। কোরবানি সামনে রেখে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা খামারিদের জন্য খুব কঠিন। আধুনিক খামারিরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিলেও প্রান্তিক খামারিদের অধিকাংশ জানেন না উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। 

আমরা মনেকরি এ সময়ে কী করণীয় সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের খামারিদের পাশে দাঁড়ানো দরকার।


মানবকণ্ঠ/এফআই