Image description

সারা দেশে বয়ে যাওয়া তীব্র গরম আবহাওয়া সহসাই কমছে না। বরং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে করছে নানা ভুল। বাড়াচ্ছে  স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা ঠেলে দিতে পারে মৃত্যুর দিকে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করতে পারে। অর্থাৎ হিট অ্যালার্ট বহাল থাকবে। এপ্রিলজুড়েই এ অবস্থা চলবে বলে আভাস দিয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন  বিভাগের কয়েকটি স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি হালকা বৃষ্টি হতে পারে, তবে এতে তাপমাত্রা কমবে না।

সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা এভাবে বলেছেন যে এপ্রিলে তাপমাত্রা বেশি থাকে। বর্তমানে যে তাপমাত্রা রয়েছে তা আরও বাড়তে পারে। তাপমাত্রা বাড়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করার আভাস রয়েছে। কয়েকদিনে ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে ঢাকায় প্রায় প্রতিদিন ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে বছরের ১৬ এপ্রিল আগের ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বর্তমানে আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে রয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাছাড়া  ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের কিছু অংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। 

আবহাওয়াবিদরা জানান, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষের শরীরে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে।  আর  তাই আমরা একটু স্বস্তির জন্য বারবার খাচ্ছি খাবার স্যালাইন। 

খাবার স্যালাইন আবিষ্কার হওয়ার পরেই ডায়রিয়া নিরাময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর জন্য সুস্থ হয়েছে কোটি মানুষ। আমাদের শরীর ঘামলে পানিশূন্যতার ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু অনেককেই দেখা যায় একটু ঘামলে অথবা কাজ করে ক্লান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন খেয়ে নেন। দিনে দুই থেকে তিনটি স্যালাইনও অনেককেই খেতে দেখা যায়। আসলে স্যালাইন খাওয়ার ফলে রক্তে যে লবণের ক্রিয়া হয় তা সব ধরনের শরীরের জন্য কতটা উপকারী আমরা কি সঠিকভাবে জানি? এক্ষেত্রে যদি কারো হাই ব্লাড প্রেসার থাকে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই স্যালাইন খায় তাতে কি তার শরীরে প্রভাব পড়বে না?
স্যালাইনের উপাদানে সোডিয়াম ক্লোরাইড উপস্থিত থাকার কারণে রক্তে ইলেকটোলাইট ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে শ্বাসকষ্ট হলেও তা অস্বাভাবিক হবে না। অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ার ফলে রক্তে লবণের পরিমাণ বেড়ে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। তুচ্ছ কারণে স্যালাইন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরি। স্যালাইন খাওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক পরিমাপ জানতে হবে। এ ছাড়াও দিনে এক প্যাকেটের বেশি স্যালাইন খেলে তা অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। খাবার স্যালাইন ভালো কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একদিনে কয়েকটি খাওয়া তাও শুধুমাত্র একটু ক্লান্তি বা ঘামের জন্য খাওয়া মারাত্মক ক্ষতি। আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে। এই গরমে বেশি করে পানি পান করুন। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। আর বেশি করে গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি