Image description

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ। ইতোমধ্যে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে প্রায় ২০ জন। সরকারের থেকে বার বার বলা হচ্ছে প্রচুর বৃক্ষ রোপণের জন্য। এ অবস্থায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে তিন হাজার বৃক্ষের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বজায় রাখতে গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকার লোকজন ও সড়কটি নিয়মিত ব্যবহারকারী আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে এভাবে হাজার হাজার গাছ কাটা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না বলে উল্লেখ করেছেন তারা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সড়কের পাশে শত শত বৃক্ষ। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় এগুলো লাগানো হয়েছিল। সেইসব গাছ পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়ে মানুষের আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিন মাস আগেও সড়কের ধারে গাছগুলো ছিল নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এ গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিত পথচারী, খেটে খাওয়া মানুষ। আরামে চলাচল করতেন পথচারীরা। গাছগুলোতে আশ্রয় নিত পাখিরাও। এখন সেখানে যেন ধু-ধু মরুভূমি, তীব্র দাবদাহ। সামান্য টাকার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল গাছগুলো কেটেছে। এসব গাছ না কাটার জন্য এলাকাবাসীর তীব্র আকুতি কেউ  শোনেনি। 

‘সামাজিক বনায়ন বিধির’ দোহাই দিয়ে প্রায় তিন হাজার গাছ কাটার আয়োজন চলছে সড়কটিতে। প্রতিটি গাছের বাকল কেটে গায়ে লাল কালিতে দেয়া হয়েছে নম্বর। এ যেন একেকটি গাছের মৃত্যু পরোয়ানা। 

বন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নম্বর দিয়ে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এখনো কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। কিন্তু তার আগেই গাছ কাটার কাজ শুরু করা হয়। খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে হাজির হলে পরে পুলিশ গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়। 

জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। আর চাঁপড়া বোর্ড অফিস এলাকায় খাল লাগোয়া পাকা ও কাঁচা সড়কের দুই পাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। কাটার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে যেগুলোর গায়ে দেয়া হয়েছে নাম্বার। 

এলাকার ভ্যানচালকদের আবেদন তারা নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে প্রায়ই সড়কে বসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। গাছগুলো কাটা হলে আর বসা হবে না। তাদের ভাষ্য, গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারে। অনেকেই বিশ্রাম নেন। তাছাড়া গাছগুলো সড়কে চলাচলে কোনো সমস্যা করছে না। তাহলে শুধু টাকার জন্য কেন কাটা হবে? নির্বিচারে গাছ কাটার কারণেই প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব গাছ কাটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ আছে মাত্র ৯ ভাগেরও কম। তবুও প্রতিদিনই গাছ উজাড় হচ্ছে। যে মুহূর্তে দেশজুড়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ চলছে, পানির মহাসংকট চলছে, প্রচণ্ড গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে, পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছে না সেই মুহূর্তে গাছগুলো কাটার আয়োজন সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা। বৃক্ষ নিধনের এই আদেশ বাতিল করার দাবি এলাকাবাসীর সঙ্গে আমাদেরও।


মানবকণ্ঠ/এফআই