Image description

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনের  মাত্র আট মাস আগে পরিবর্তন আসছে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দায়িত্বের মেয়াদ। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ পদে নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কে বসছেন ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনের মসনদে? সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নির্ভার হলেও দলের কাকে এ পদে মনোনয়ন দেবে তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। যাচাই-বাছাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। ফলে বঙ্গভবনে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে বসছেন তা এখন রাজনৈতিক আলোচনার শীর্ষে। ইতিমধ্যে যাদের নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ১ নম্বর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন। তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ ছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, দিনাজপুর-৫ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিচারপতি খায়রুল হকের নামও কেউ কেউ বলছেন। তবে কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি সেটি নির্ভর করছে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
সূত্র মতে, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার সংসদীয় দলের বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে এ বৈঠক হবে। 
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী ও সংসদীয় দলের একজন সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতেই সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।গত রোববার সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সপ্তম সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবক হতে হয় সংসদ সদস্যদের। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে। আর সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। তাই আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবক ও সমর্থক কারা হবেন, সেটিও চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন, তিনিই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে বসবেন। নানা বিচার-বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এখন পর্যন্ত মশিউর রহমান ও ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম সর্বোচ্চ বিবেচনায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে শিরীন শারমিন চৌধুরীই সম্ভাব্য সেরা প্রার্থী। আর সেটা হলে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা সবাই হবেন নারী।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা বলেন, সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেকোনো সংকট তৈরি হলে সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ^স্ততার সঙ্গে যিনি সংকট থেকে উত্তরণে অবস্থান নিতে পারবেন, তেমন কাউকেই এ পদে বসাবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে এ পদে নির্বাচিত করবেন। তিনি বিশ্বস্ত, দলের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ ও অনুগত ব্যক্তিকেই বেছে নেবেন।  
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যে যাই বলি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। রাষ্ট্রের এ সর্বোচ্চ পদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে বিবেচনায় রেখেছেন। রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে দলের একটি সংসদীয় বোর্ড আছে। এ বোর্ডের দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদসহ জাতীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া। এ সংসদীয় বোর্ডের সভা আজ। সভা থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী ঠিক করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে সবকিছু সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হয়তো ঠিক করে সংসদীয় বোর্ডে উত্থাপন করবেন। এরপর সংসদীয় বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। আজ সংসদীয় বোর্ডের সভা রয়েছে। এ সভা থেকে প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এদিকে আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের চলমান টানা তিন মেয়াদের সরকারের প্রথম বছরে দলের প্রবীণ নেতা জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বার্ধক্যের কারণে ২০১৩ সালে মারা যান তিনি। এরপর জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় এবং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালেও তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে রাখা হয়। সংবিধান অনুযায়ী দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিধান নেই।
তাই বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পর নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রপতির ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে সংবিধানে। সে অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। যাচাই-বাছাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
এ নির্বাচনে ভোটার সংসদ সদস্যরা। ভোটার সংখ্যা ৩৪৩ জন। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, গণফোরামের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, তরিকত ফেডারেশনের ১টি ও জেপির ১টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন তিনজন।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা: সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাকে দেওয়া ও অর্পিত সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করবেন তিনি। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কারও পরামর্শ নেওয়ার দরকার নেই। বাকি সব দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।