
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৬০তম অধিবেশনে অনুষ্ঠিত “Voices from the Margins” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্টে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি। এ সময় Global Human Rights Defence (GHRD)-এর আয়োজনে এই ইভেন্টে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্য ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে International Forum for Secular Bangladesh-এর নির্বাহী সভাপতি রহমান খালিলুর মামুন বলেন, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী সম্প্রদায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করছে। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানান, সতর্ক করে দেন যে বৈশ্বিক মনোযোগ ছাড়া সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়বে।
পাকিস্তানের আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মেহম্মদ উর রহমান আনোয়ার। তিনি বলেন, আহমদিরা শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশের জন্যই অপরাধের শিকার হন। পাকিস্তানের ধর্মদ্রোহ আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়নের কঠোর সমালোচনা করে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তামিল সম্প্রদায়ের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জনাব রবি কুমার। তিনি শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ও চলমান বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের সাম্প্রতিক সফর ও OHCHR-এর Accountability Project (OSLAP)-এর কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মনোযোগ সত্ত্বেও অতীত অপরাধের জন্য যথাযথ জবাবদিহি এখনো অনুপস্থিত।
GHRD-এর মানবাধিকার কর্মকর্তা শার্লট জেহরার বক্তব্যে তিব্বতে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি মানবাধিকার পরিষদকে এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করার আহ্বান জানান।
শার্লট জেহরা জোর দিয়ে বলেন, 'সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা কোনো দয়া নয় — এটি ন্যায়ের, সমতার এবং মর্যাদার প্রশ্ন।' তিনি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সংখ্যালঘুদের অধিকারকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে জোরালোভাবে তুলে ধরা, এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ইভেন্টটি শেষ হয়।
Comments