
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে ব্যাপক পাথর লুটপাটের ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহের নেতৃত্বে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে লুটপাটে জড়িত ১৩৭ জনের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এছাড়া, পাথর লুটপাট রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় ১০টি সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে লুটপাটের কারণ, জড়িত ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড এবং পরিবেশের ক্ষতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে কমিটির প্রধান পদ্মাসন সিংহ প্রতিবেদনের বিস্তারিত প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনিই ব্যবস্থা নেবেন।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। এদিকে, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, “পাথর লুটকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়ে কাজ চলছে। তালিকা প্রকাশ করা হবে।”
প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে সিলেটের ৮টি পাথর কোয়ারির ইজারা বন্ধ করা হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সাদাপাথর থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর অবৈধভাবে লুট হয়, যার ফলে এলাকাটি প্রায় পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশের কারণে এই লুটপাট সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। হাইকোর্ট সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ৬০ দিনের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা হলফনামা আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলায় ৯৫ হাজার ঘনফুট এবং গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে। তবে কোম্পানীগঞ্জে উদ্ধারের পরিমাণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, এক বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি।
Comments