Image description

'জনকণ্ঠ' পত্রিকার 'নিউজ কার্ডের' রঙ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ এখন মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। পত্রিকার উপপ্রধান প্রতিবেদক ইস্রাফিল ফরাজি সম্পাদক শামীমা এ খানসহ মোট ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

মামলার মূল অভিযোগ ও ঘটনাপ্রবাহ

মামলা: শনিবার (২ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর হাতিরঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এতে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের ভাইস চেয়ারম্যান জিসাল এ খান এবং ১৫ জন নামসহ মোট ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে করা হয়েছে।

'লাল-কালো' বিরোধ: ১ আগস্ট জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজে আওয়ামী লীগের শোক দিবসের সঙ্গে মিল রেখে নিউজ কার্ডের রঙ লাল থেকে কালো করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। বাদীর অভিযোগ, এই বিষয়টি শামীমা খান ও তার ছেলে জিসাল এ খানকে জানানো হলে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কালো রঙ ব্যবহারের পক্ষে সমর্থন দেন।

হুমকি ও হামলা: মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, পরবর্তীতে সাংবাদিক আজাদ সোলায়মান অফিসে এসে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে প্ল্যানিং এডিটর জয়নাল আবেদীন শিশির এবং সাংবাদিক মীর জসীমসহ আরও কয়েকজনের ওপর চড়াও হন এবং হুমকি দেন। এ সময় সাবরিনা বিনতে আহমেদ নামের এক অনলাইন উপদেষ্টাকে যৌন হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

মালিকপক্ষ (শামীমা এ খান): শামীমা এ খান এই ঘটনাকে 'স্যাবোটাজ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার দাবি, লাল থেকে কালো রঙ করার কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না এবং এটি আন্দোলনকারী অংশের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের পতনের পর ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা আফিজুর রহমান বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে পত্রিকায় নিয়োগ দিয়েছেন, এবং তারাই পত্রিকা দখলের ষড়যন্ত্র করছেন।

আন্দোলনকারী পক্ষ: অপরদিকে, 'সম্পাদকীয় বোর্ড সদস্য' ইস্রাফিল ফরাজি এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ও মঙ্গলবার পত্রিকার মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মালিকপক্ষ 'ফ্যাসিবাদী' আচরণ করে পত্রিকার ব্যানার কালো রঙ করে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের অবমাননা করেছে। তারা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। শিশির এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা কেবল কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মতিক্রমে পত্রিকা বাঁচানোর স্বার্থে একটি সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন করেছেন।

আন্দোলনের পাঁচ দফা দাবি

আন্দোলনকারী অংশটি তাদের দাবিসমূহ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে। তাদের পাঁচটি দাবির মধ্যে রয়েছে:

শহীদদের অবমাননা করে কালো টেমপ্লেট ব্যবহার করার জন্য মালিকপক্ষকে শাস্তির আওতায় আনা।

জুলাই বিপ্লবের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করা।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা।

চাকরিচ্যুত তিন শতাধিক ব্যক্তির পাওনা টাকা দেওয়া।

পাওনাদারদের বকেয়া পরিশোধ করা।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে এটি আওয়ামী লীগপন্থি পত্রিকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।