Image description

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীন অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শিগগির শুরু করা হবে। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়ির একটি ভবনের চারটি ফ্লোরে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

দিয়াবাড়ির ভবনে এরই মধ্যে শ্রেণিকক্ষসহ সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্রুত শুরু হবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। তবে এ বিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে রাজধানীর পূর্বাচলে। সেখানে পর্যাপ্ত জমিও কেনা হয়েছে।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হচ্ছে। অনুমোদন পেলেই তারা বলতে পারবেন, এ ইউনিভার্সিটিতে কী কী বিষয় পড়ানো হবে। 

এর আগে ১৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২২ শর্তে এই ইউনিভার্সিটি স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ ট্রাস্ট এই ইউনিভার্সিটির জন্য আবেদন করে। এটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে অলাভজনক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ট্রাস্ট দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সামাজিক ব্যবসাকে ব্যবহার করে থাকে।

ইউনিভার্সিটিকে দেওয়া শর্তের মধ্যে আছে সাময়িক অনুমতির মেয়াদ হবে সাত বছর, প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটির কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। ন্যূনতম তিনটি অনুষদ এবং এসব অনুষদের অধীন কমপক্ষে ছয়টি বিভাগ থাকতে হবে। ইউনিভার্সিটির নামে সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা যে কোনো তপশিলি ব্যাংকে জমা থাকতে হবে। এ রকম ২২টি শর্ত তাদের মানতে হবে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কী? ভিন্নতা কী থাকবে? জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশনকে সামাজিক ব্যবসার নীতিমালা ও  বৃহত্তর লক্ষ্য– তিন শূন্য অর্জন (জিরো পোভার্টি, জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট, জিরো নেট কার্বন এমিসনস) লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। 

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হবে চাকরিপ্রার্থী নয়, চাকরিদাতা তৈরি করা। এখানে সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত কারিকুলাম থাকবে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে তিন শূন্য অর্জনের লক্ষ্য পূরণ করা হবে। হাতেকলমে শিক্ষা, কমিউনিটির সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

প্রতিষ্ঠাতারা জানান, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার একটি সাহসী পদক্ষেপ। এটিকে এমন একটি ক্ষেত্র হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতের সামাজিক উদ্যোক্তারা তৈরি হবে; যারা একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেলকে নেতৃত্ব দেবেন, যা হবে মানবকেন্দ্রিক, সমস্যার সমাধানমুখী এবং পরিবেশবান্ধব।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়, যা এমন সব বৈশ্বিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, যারা একসঙ্গে তিন শূন্যের পৃথিবী (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ) গঠনের লক্ষ্যে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি হবে তিন শূন্য অর্জনের পথপ্রদর্শক এবং সামাজিক ব্যবসা আন্দোলনকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতীক ও কার্যকর হাতিয়ার। 

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে দ্রুতই। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে, তবে তা পর্যায়ক্রমে আরও বিস্তৃত হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে পূর্বাচলের উলুখোলার এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পূর্বাচলে ৭৬ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। শিগগির জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বেশ কয়েকটি বিভাগ খোলার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। ইউজিসিতে আবেদন করা হবে। ইউজিসি যত বিষয় খোলার আবেদন মঞ্জুর করবে, তত বিষয় নিয়েই গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করবে।