
প্রশাসন ক্যাডারদের পিকনিক, পুনর্মিলনী, বিজ্ঞাপন কিংবা ব্যক্তিগত খাতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে অনুদান দেওয়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ‘নিজের ক্ষমতাবলে’ এসব টাকা খরচ করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
তবে জেলা প্রশাসকের ভাষ্য, তিনি চাইলে এ তহবিলের টাকা যেখানে খুশি সেখানে ব্যয় করতে পারেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যয় সংক্রান্ত বিবরণী তুলে ধরা হয়।
সেই হিসাব অনুযায়ী, গেল বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৮ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে প্রায় ১৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। এসব ব্যয় দেখানো হয়েছে ‘বিজ্ঞাপন/অনুদান/ বিবিধ খাতে’।
খরচের নথি বলছে, তহবিলের অনুদান গেছে ২৪তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারদের পিকনিক ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে। চিড়িয়াখানার টাকায় রং করা হয়ছে ডিসি পার্কও।
এর বাইরে চিড়িয়াখানার দুই কর্মচারিকে ৭০ হাজার টাকা অনুদান ও টিকেট বই ছাপানোর কাজে ১৮ হাজার ৯০০ টাকার বাইরের ব্যয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ২৪ তম বিসিএস প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশনের ‘গ্রান্ড পুনর্মিলনী ও পিকনিকের খরচ ও বিজ্ঞাপনের’ জন্য।
রংপুর জেলা প্রশাসনের শিক্ষানবিশ এক সহকারী কমিশনারের চিকিৎসার জন্য এক লাখ অনুদানও দেওয়া হয়েছে চিড়িয়াখানার টাকায়।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবস উদযাপনে পাঁচ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা, বিভাগীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ৫০ হাজার, ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশনে এসি বিষ্ফোরণে হতাহতদের চিকিৎসা ও অনুদান বাবদ তিন লাথ টাকা, এইচআই ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল অ্যাক্সিলেন্স নামে একটি সংগঠনকে বিজ্ঞাপন বাবদ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এ তহবিল থেকে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম গণমাধ্যমকে বলেন, “চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা জেলা প্রশাসনের বাইরের কিছু না। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমার যেকোন ফান্ড থেকে আমি অনুদান দিতে পারি। আমার ফান্ডের টাকা কোথায় ব্যয় করব, সেটা আমার বিষয়। আমি টাকা আত্মসাৎ না করলে হয়েছে। এ তহবিল থেকে টাকা কর্মচারির চিকিৎসার জন্যও দেয়া হয়েছে।”
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকায় প্রায় ১০ একর পাহাড়ি জমিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদানে নির্মিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানা সরকারি অনুদান ছাড়া টিকেট বিক্রির নিজস্ব আয়ে প্রাণী সংগ্রহ, খাদ্য, কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছিল। বলা হয়, এটাই দেশের একমাত্র ‘লাভজনক’ চিড়িয়াখানা।
গত এক দশকের মধ্যে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ, জেব্রা, সিংহসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী কেনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপে জানা যায়, এ চিড়িয়াখানার তহবিলের টাকা আগে চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহার হত। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে চিড়িয়াখানার তহবিলের টাকা অন্যান্য খাতে খরচের নজির সৃষ্টি করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক।
এরপর থেকে প্রতি জেলা প্রশাসক ‘নিজস্ব ক্ষমতাবলে’ চিড়িয়াখানার তহবিলের টাকা অন্য খাতে খরচের নজির সৃষ্টি করে আসছেন।
Comments