উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: সরকার নির্ধারিত জায়গায় দাফন করতে সম্মত হননি কেউ

উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থানের উত্তর কোণে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের দাফনের জন্য এই জায়গাটিই নির্ধারণ করেছিল সরকার। সিদ্ধান্ত ছিল, পুরোনো কবরের ওপরই নতুন কবর দেওয়া হবে। তবে আপনজনদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন স্বজনেরা। তাই উত্তরার ১২ নম্বর কবরস্থানের এই পুরোনো কবরগুলোতে আর নতুন মাটি পড়েনি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে অযত্নে গজিয়ে ওঠা ঝোপঝাড়গুলোই।
সরজমিনে দেখা যায়, কবরস্থানের উত্তর কোণে কয়েকটি পুরোনো কবর, যেগুলো ঝোপঝাড়ে ঢাকা। এগুলোর কোনো নামফলকও নেই। কিছু জায়গায় সামান্য পরিষ্কারের চেষ্টা দেখা গেলেও কোন নতুন কবর খুঁড়তে দেখা যায় নি।
কবরস্থানের খাদেম মাঈনুদ্দিন জানান, "আমরা শুনেছিলাম এখানে ২০ জনকে কবর দেওয়া হবে। গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত আমরা এখানে অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু কেউ এখানে লাশ দাফন করতে আসেনি।" তিনি আরও বলেন, "এখানে কোনো কবর খোঁড়া হয়নি। তবে আমাদের লোকজন প্রস্তুত ছিল। পরে শুনেছি নিজেদের সন্তান বা আত্মীয়ের লাশ তারা নিজেদের বাড়িতে নিয়ে কবর দিয়েছে।"
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিহত ছাত্র আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শামীমের বড় বোন ফারজানা কনিকা জানালেন তাদের স্বজন হারানোর মর্মান্তিক কাহিনি। তিনি বলেন, "শরীয়তপুরে বাবার পাশেই কবর দিয়েছি আব্দুল্লাহকে। বাবা-ছেলে পাশাপাশি শুয়ে আছে।" অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কনিকা আরও বলেন, "আমরা তিন ভাইবোন। মাত্র সাত মাস আগে বাবাকে হারিয়েছি। এবার হারালাম ১৪ বছরের ভাইকে। ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করিনি। ওর মরদেহ নিয়ে শরীয়তপুর রওয়ানা হয়েছিলাম।"
আরেক নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাসুকা বেগমের স্বজনরা জানান, মাসুকার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী আমরা তার বোনের বাড়িতে দাফন করেছি। গতকাল বিকেলে তার মরদেহ বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি আশুগঞ্জের সোহাগপুরে নেওয়া হয় এবং সন্ধ্যা ছয়টায় দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য মাইলস্টোন স্কুলের সন্নিকটস্থ উত্তরা ১২ নম্বরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে এই কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছিল। ।
Comments