
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দগ্ধ অবস্থায় মরিয়া হয়ে স্কুল মাঠে দৌড়াচ্ছিল এক শিক্ষার্থী, যার শরীরের জামাকাপড় সব পুড়ে গিয়েছিল এবং পা থেকে গলা পর্যন্ত বেশিরভাগ অংশের চামড়া ঝলসে গিয়েছিল।
এই শিশুটির নাম রবিউল হাসান নাবিল, পরিবারে সে রোহান নামেই পরিচিত। সে স্কুলের ইংরেজি সংস্করণের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ১৪ বছর বয়সী রোহানের পরিচয় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জানা যায়নি, তবে তার জ্বলন্ত ছবি পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেলেটির ভিডিও দেখে মানুষ কেঁদেছিল এবং অনেকেই তার বেঁচে থাকার জন্য প্রার্থনায় হাত তুলেছিল। তার এই মর্মস্পর্শী দৌড় দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এবং হতাহতদের দুর্ভোগের এক করুণ প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি মেট্রোরেলের তিন নম্বর কোচে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন, যা ওই কোচের সকল যাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মোবাইল ফোনে কথা বলা শেষে তার কাছে কান্নার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি জোরে চিৎকার করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘ভাইরে যে ছেলেটি স্কুলের মাঠের মধ্যে দিয়ে জ্বলন্ত দেহ নিয়ে দৌড়াচ্ছিল, বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিল, ওটা আমার ছেলে।’ বলতে বলতে তার কন্ঠ কাঁপছিল। তার কান্না আরও জোরে বাড়তে থাকলে, পুরো কোচে ছড়িয়ে পড়ে। তার দুঃখের বোঝা কাছাকাছি বসে থাকা সকলেই অনুভব করেছিল।
রোহানের বাবার নাম নিজাম উদ্দিন, পেশায় পাইলিং ঠিকাদার। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে তার বাড়ি। পরিবারটি উত্তরার সেক্টর ১২-এর ১৫ নম্বর রোডের ৫০ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে থাকে। রোহান এখন বার্ন ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন, ৫০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে তার শরীর।
‘আমার ছেলের জন্য দোয়া করেন,’ তার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে থাকেন, ‘রোহান তার পোড়া শরীর নিয়ে দৌড়াচ্ছিল। তার পরনে কোনও পোশাক ছিল না। এক পর্যায়ে, কিছু লোক তাকে ওই অবস্থায় রিকশায় করে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন পর্যন্ত কী ঘটেছিল তা আমরা জানতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট ছেলেটি সাহসী। ভিডিওটি দেখে লোকেরা আতঙ্কিত হলেও, তার হৃদয় ছিল শক্তিশালী। হাসপাতালে, সে নিজেই তার মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। এভাবেই আমরা জানতে পারি সে কোথায় আছে।’
একই কোচে ছিলেন রোহানের চাচা মোতাছের হোসেন, যিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে তাদের বাসা থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। তারা রোহানের বাসা থেকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যাচ্ছিলেন।
নিজাম যখন কথা বলছিলেন, মোতাছের চুপচাপ তার চোখের জল মুছে দিচ্ছিলেন। নিজাম তার পরিবারের কথা আরও জানালেন। তার বড় ছেলে শিহাব এবং একমাত্র মেয়ে নাসরিন সুলতানা নুপুরও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছে।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে, আমি আমার বাচ্চাদের এই স্কুলে পাঠিয়ে আসছি। সোমবার আমি রোহানকে স্কুল গেটে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। এখন সে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। ওর মা নাসিমা বেগম তার পাশে থেকে সন্তানের যত্ন নিচ্ছেন।
আরআই/মানবকণ্ঠ
Comments