
জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১৮টি সুপারিশকে 'আশু বাস্তবায়নযোগ্য' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার প্রস্তাবনাগুলো সরকারের কাছে জমা পড়েছে। এর মধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ও বড় সংস্কারের বিষয়ে 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশন' কাজ করছে। তবে, যেসব প্রশাসনিক সংস্কার মন্ত্রণালয়গুলো নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৫ মে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি পত্র পাঠিয়েছে।
সভায় আরও জানানো হয় যে, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের মোট ১২১টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কার্যক্রমের জন্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ৯টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩৮টি, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের ৪৩টি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সংস্কার প্রস্তাবকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।
গত ১৬ জুনের সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব। এর মধ্যে আটটি অপেক্ষাকৃত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এগুলো হলো:
১. মহাসড়কের পেট্রোল-পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সকল পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করবে। জেলা প্রশাসন এর বাস্তবায়ন তদারকি করবে।
২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ডাইনামিককরণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সকল মন্ত্রণালয়ের সাথে সভা করে ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য আপলোড এবং নাগরিকদের মতামত প্রদানের বিকল্প রাখার বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেবে। ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স ইন্টারঅপারেবিলিটি'র কাজ দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
৩. সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ম্যানেজিং কমিটি: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২ দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে, যা ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ভেটিং সম্পন্ন হবে। জারির এক মাসের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে হবে।
৪. বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা: স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার সাথে সভা করে কমিউনিটি স্বাস্থ্য পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ করবে।
৫. সকল সরকারি দপ্তরে গণশুনানি: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সকল সেবা প্রদানকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে বৈঠক করে গণশুনানির কৌশল নির্ধারণ করবে।
৬. তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ পর্যালোচনা ও সংশোধন: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে 'বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন' হিসাবে রূপান্তর: বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান সংস্কার কার্যক্রমের সাথে কমিশনের সুপারিশ সমন্বয় করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন করা হবে।
৮. ডিজিটাল রূপান্তর এবং ই-সেবা শক্তিশালীকরণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বর্তমান সরকারের নাগরিক প্লাটফর্মে সকল সেবা অন্তর্ভুক্ত করার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স ইন্টারঅপারেবিলিটি সিস্টেম দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে এবং সময়াবদ্ধ কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) এই কার্যক্রম তদারকি করবে। এছাড়াও, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন তদারকি করবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে নিয়মিত সভা আয়োজন করা হবে।
বিগত মাসগুলোতে সরকারের ৫৪টি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৬১টি ছোট-বড় সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। এই নতুন উদ্যোগগুলো সামগ্রিক জনপ্রশাসনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Comments