Image description

দেশের বিচার ব্যবস্থায় জমে থাকা মামলার জট কমাতে এবং দ্রুত ও স্বল্প খরচে বিচার নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, "মানুষকে মামলার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতেই আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে।" আগামী মাস থেকে আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের সংশোধনের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইড) কার্যালয়ে 'আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ-২০২৫' নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, আইনগত সহায়তা প্রদানে  তিনটি প্রধান লক্ষ্য নিয়ে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫ লাখ নতুন মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মাত্র ৩৫ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়। এই হার বাড়িয়ে বছরে ২ লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সামগ্রিক মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আইনের পরিবর্তন অপরিহার্য। বিশেষ করে, আপোষযোগ্য পারিবারিক মামলা, চেক ডিজঅনার সহ ছোট ছোট মামলাগুলোকে আপোষের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক নিষ্পত্তির আওতায় আনা হবে।

ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, আদালতে মামলার অস্বাভাবিক চাপ শুধু বিচারিক কাঠামোকে নয়, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই চাপ কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) পদ্ধতিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। তার মতে, নতুন মামলার চাপ কমানোর জন্য মামলার পূর্বে আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দ্রুত সময়ে ও অল্প খরচে মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে সিভিল প্রসিডিউর কোড ইতোমধ্যেই সংশোধন করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি সংস্কারের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এছাড়া, লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একজন বিচারকের পরিবর্তে তিনজন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও আইন উপদেষ্টা জানান।

মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ছিলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক আজাদ সুবহানি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সায়েম খান এবং বিভিন্ন জেলা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা । তারা লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের প্রচারে ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরেন এবং জানান যে, গ্রামাঞ্চলের অনেক গরিব মানুষই সরকারের এই আইনি সহায়তা সম্পর্কে অবগত নয়। তারা এই সেবার প্রচার বাড়ানোর এবং বিভাগীয় পর্যায়ে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে পরামর্শ গ্রহণের সুপারিশ করেন।