Image description

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার লন্ডনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক থিঙ্কট্যাংক চ্যাথাম হাউসে আলাপচারিতায় এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। 

চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্সের সঞ্চালনায় আলাপচারিতায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিন দায়িত্ব—সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

সেখানে সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করেন, যে জুলাই সনদ হচ্ছে, সমালোচকেরা বলবেন, অনেক রাজনৈতিক দলকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে, যারা এর সঙ্গে একমত নয়, যেমন আওয়ামী লীগ; তাদের জন্য কোনো জায়গা রাখছেন না। সুতরাং, মানুষকে কোনো বিকল্প দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, এটা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। এটা ঐকমত্য সম্পর্কে অনেক কথায় সুন্দরভাবে মোড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, হ্যাঁ। ঠিক আছে, এ নিয়েও বিতর্ক আছে। বিতর্ক হলো আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিক দল? যদি তারা রাস্তায় এভাবে তরুণদের হত্যা করতে পারে, এভাবে মানুষকে গুম করতে পারে, এভাবে টাকা চুরি করতে পারে, আমরা কি তখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলব? সুতরাং এটি একটি বিতর্ক। এটি কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর এটি শেষ হবে। এখন এটি একটি নতুন দেশ, যেখানে তারা নেই। কিন্তু যারা পালিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটা শেষ হয়নি। অনুপস্থিত থেকেও অন্য দেশ থেকে একইভাবে কাজ চালিয়ে গেছে, মানুষকে উসকানি দিচ্ছে, রাস্তায় সংঘর্ষ করছে। এখন ১০ মাস পার হয়ে গেছে, এর মধ্যে দলটির কেউ অনুশোচনা, দুঃখ প্রকাশ বা দোষ স্বীকার করেনি। বলেনি, কেউ আদেশ দিয়েছে, তাতে কেউ নিহত হয়েছে, আমি এর জন্য দায়ী নই। আমার খারাপ লাগছে যে আমাকে এটার অংশ হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। ফলে আমাদের কাছে এটা শেষ, কিন্তু তাদের কাছে এটা এখনো চলছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, আমরা নিরাপদ বোধ করি না; তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করে, লোকজনকে হুমকি দেয়। তারা ইতিমধ্যে এই অভ্যুত্থানের নেতাদের হুমকি দিয়েছে। সুতরাং দেশের নিরাপত্তা, দেশের রাজনীতির নিরাপত্তার জন্য জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এটুকুই আমরা করেছি। আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

এ সময় সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, বিচারের বিষয়টি কেন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না? কেন অন্তর্বর্তী সরকার এটা নিয়ে কাজ করবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। যারা আমাদের দায়িত্ব নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তারাই আমাদের এ কাজটি দিয়েছে। 

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বাংলাদেশে যে বিতর্ক চলছে, সে বিষয়টি সামনে এনে সঞ্চালক বলেন, সব মিলিয়ে অনেকে বলছেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। 

জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন। সময় ঠিক আছে, জনগণও প্রস্তুত। ১৭ বছর পর আপনি একটি সত্যিকারের নির্বাচন পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচন একটি নতুন সরকার নির্বাচনের রুটিন ভোট হবে না, এটা হবে নতুন বাংলাদেশের জন্য ভোট। আমরা পুরোনো বাংলাদেশকে বিদায় বলে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই।

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন–পীড়নের অনেক খবর পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চান সঞ্চালক। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা সত্যি নয়। তাদের জীবনে এত স্বাধীনতা কখনো ছিল না। তারা যা খুশি বলতে পারছে।