Image description

কাকরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে রাজধানীর কাকরাইল মোড় এখনও অবরোধ করো রেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে কাকরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এর প্রবেশ গেট এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সামনের এলাকা।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন দাবি আদায়ের কর্মসূচির নামে হঠাৎ করে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের পুনরায় অনুরোধ করা হচ্ছে।

এদিকে তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এছাড়া টানা ৩০ ঘণ্টা রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করো রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন। এছাড়াও তারা ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও তুলেছেন।

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন, 'আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছি। কিন্তু গতকাল শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে পুলিশ যেভাবে হামলা করেছে, তা সম্পূর্ণ অরাজকতা ও অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি।

এসময় এই শিক্ষক বলেন, 'দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন চলবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না। আমাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় ভালো হবে না। চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।'

এ সময় শিক্ষার্থীরা 'আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়', 'বাজেট কাটছাঁট চলবে না', 'হামলার বিচার চাই প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।

জবি শিক্ষার্থীরা এর আগে গত মঙ্গলবার (১৩ মে) তাদের তিন দফা দাবি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ইউজিসির প্রতিক্রিয়ায় তারা সন্তুষ্ট নন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার (১৪ মে) লংমার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়।

গতকাল (১৪ মে) গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। লং মার্চটি গুলিস্তান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানিও ছোড়া হয়।

জবি শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই সংঘর্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ  অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এরপর সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা কাকরাইল এলাকা অবরোধ করেন। গতকাল রাতভর জবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে রাস্তায় অবস্থান করেন এবং সকালে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন।

আজ (১৫ মে) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় কাকরাইল এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদ উপস্থিত ছিল।

এদিকে, অবরোধের কারণে কাকরাইল এলাকা এবং এর আশপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখায় কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেড়েছে, কারণ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'কথা বলো যমুনা, খালি  হাতে যাবো না'; 'যেই হাত ছাত্র মারে, সেই হাত ভেঙে দাও' — স্লোগান দিতে শোনা যায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়েও আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে দেখা যাচ্ছে। 

চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে অনেক সাবেক শিক্ষার্থীও যুক্ত হচ্ছেন এই কর্মসূচিতে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে তারা ঢাকায় এসে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।

অপরদিকে, কাকরাইল এলাকায় পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন 'যমুনা'র দিকে মিছিল যাতে না এগোতে পারে, সেজন্য এলাকাজুড়ে কঠোর ব্যারিকেড বসানো হয়েছে।