
সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা এবং হজযাত্রীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারমিট ছাড়া হজ পালন না করার জন্য দেশে ও সৌদি আরবে অবস্থানকারী সকল বাংলাদেশিকে অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একইসাথে, হজ বিধিমালা অমান্যকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা, পরিবহণ, সংরক্ষিত হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা এবং আবাসনের ব্যবস্থা করা থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২ মে) মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চলতি হজ মৌসুমে ভিজিট ভিসায় মক্কা কিংবা সৌদি আরবের পবিত্র স্থানসমূহে অবস্থান না করারও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর হজযাত্রীদের মক্কায় প্রবেশ সহজ করা, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সৌদি সরকার নতুন বিধিমালা জারি করেছে। এই বিধিমালা অনুযায়ী, পবিত্র স্থানগুলোতে কাজের বৈধ অনুমতিপত্র, মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা) ও সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ পারমিট থাকলেই কেবল মক্কায় প্রবেশ করা যাবে।
আসন্ন হজ মৌসুমে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, হজ পারমিট ছাড়া কেউ হজ পালনের চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে। এমনকি এই কাজে সহায়তা করলেও এক লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। শুধু জরিমানাই নয়, অপরাধ প্রমাণিত হলে সহায়তাকারীর নিজস্ব যানবাহনও আদালতের রায় অনুসারে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
সৌদি সরকার আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি কোনো বিদেশি নাগরিক নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত অবস্থান করে অথবা বৈধ অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর তাকে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
জিলকদ মাসের ১ তারিখ (২৯ এপ্রিল) থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ (১০ জুন) পর্যন্ত এই কঠোর বিধান কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে হজের অনুমতি ছাড়া পবিত্র মক্কা নগরী বা এর আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে কারো প্রবেশ বা অবস্থান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন, তাদের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হবে।
সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় আইন-কানুনের কঠোর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার ঘোষিত আইনকানুন ও বিধিনিষেধ অনুসরণ করা আবশ্যক। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে। প্রায় ৩৫ লাখ বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত। দেশ থেকেই আসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। দুদেশের বিদ্যমান সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।”
তিনি মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অননুমোদিত হজ পালন থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেন, “হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং টিম ওয়ার্ক। সৌদি আরব এবং মুসলিম দেশসমূহের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় হজ পরিচালিত হয়। তবে হজ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সৌদি আরব মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ ও অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
তিনি সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজযাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সৌদি সরকারের প্রচলিত আইন কানুন ও বিধি বিধান অনুসরণের ওপর জোর দেন। একইসাথে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকারের সকল পদক্ষেপকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাগত জানায় বলেও জানান তিনি।
ধর্ম সচিব আরও বলেন, হজের পবিত্রতা রক্ষা এবং সকল হজযাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং ২০২৫ সালে বাংলাদেশ একটি সফল হজ আয়োজন করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Comments