Image description

১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহƒত ‘বধ্যভূমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ রাখা হয় ৪৪২ কোটি টাকা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে প্রতিটির জন্য ব্যয় ধরা হয় ৮০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৩৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। যদিও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আড়াই বছর আগেই। এরপরও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সভায় প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। কাজ এগিয়ে নিতে গণপূর্তসহ অন্যদের যে সহযোগিতা দেয়ার কথা ছিল, তাদের সহযোগিতার অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। কাজ শুরুর পর প্রকল্পের মেয়াদ এখন পর্যন্ত সাতবার বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে ঝিলমিল আবাসিক এলাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। এখন পর্যন্ত কোনোটিরই সন্তোষজনক অগ্রগতি নেই। শুধু এসব প্রকল্পই নয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত  মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অধিকাংশেরই বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। যে কারণে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, চলমান প্রকল্পগুলো শেষ না করে নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করার জন্যও কমিটি অনুশাসন দিয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এই অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। এ সময় কমিটির সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, মো. মাহবুবউল আলম হানিফ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রাণ গোপাল দত্ত, অপরাজিতা হক, মো. শাহরিয়া আলম এবং খাদিজাতুল আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিটির সদস্যরা গণপূর্তের প্রকল্পগুলোর ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল প্রকল্প নিয়ে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেশি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প এখনও বসবাস অনুপযোগী না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প দুটো যাতে দ্রুত বসবাসের উপযোগী হয়, সেই পরামর্শ আমরা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। শুধু রাস্তা করলেই হবে না। সেখানে ওয়াসার সুযোগ-সুবিধা লাগবে, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লাগবে। এগুলো হলেই মানুষ বাড়িঘর করে সেখানে থাকবে। তা না হলে থাকবে না।

এদিকে বৈঠকে পূর্বাচল নতুন শহরে প্রবাসীদের প্লট বিক্রির বিষয়ে কথা বলেন কমিটির সদস্য শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, প্রবাসী কোটায় প্লট নেয়ার পরে অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের পরে কমিটির সদস্য ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্প পরিদর্শনের প্রস্তাব দেন। পরে কমিটি তা গ্রহণ করে। তবে রাজউকের চেয়ারম্যান পদে মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার সদ্য নিয়োগ পাওয়ায়, পরিদর্শন আগামী জুলাই মাসে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ও কর্ম বণ্টন এবং এর আওতাধীন চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ও কর্ম বণ্টন এবং এর আওতাধীন চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতির উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়। এ সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্তকরণ এবং গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ডকরণ বর্ষাকালের পরিবর্তে শীতকালে করার জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের টেন্ডার আহ্বান করার কার্যক্ষমতা ও বিধি-বিধান রয়েছে কি না তার তথ্য উপাত্ত আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটির কাছে উপস্থাপন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি