Image description

বান্দরবানের দুই থানায় প্রকাশ্যে ব্যাংক ডাকতি ও অস্ত্র লুট করা পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফের) প্রধান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের সাবেক ছাত্র নাথান বম এখন কোথায় রয়েছে— এ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। তার সংগঠনটির দাবি, পাহাড়ের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইজারল্যান্ডে আছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি নেদারল্যান্ডসে আছেন। আবার সীমান্ত পেরিয়ে নাথান বম ভারতের মিজোরামে আছেন বলেও কেউ কেউ মনে করেন। ফলে তার অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলছে না। 

অপরদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে, বান্দরবানের ধুপপানি ছড়া এলাকা থেকে কেএনএফের ৯ সন্ত্রাসীকে অস্ত্র ও গুলিসহ অস্ত্রসহ আটক করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। 

অন্যদিকে বান্দরবানের র’মা ও থানচির স্থানীয় বাসিন্দা ও কেএনএফ সূত্রের দাবি, পাহাড়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিন বা কেএনএফের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য বাংলাদেশের ভেতরই আছে। তবে এর চেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য ছড়িয়ে আছে মিয়ানমার ও মিজোরামের বিভিন্ন এলাকায়। ওই রাজ্যসংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের একটি জায়গায় মূল হোতা নাথান বম আছেন সন্দেহ করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্রের, যে ব্যাংকে দুই দফা হামলার পর কেএনএফের বেশিরভাগ সদস্যই আসলে পালিয়ে গেছে। আর নাথানের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে স্পষ্ট করে তারা কেউ কিছু বলছে না।

কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের (আইআইবি) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং একটি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, কেএনএফের প্রধান নাথান বম আসলে এখন সুইজারল্যান্ডে আছেন। সেখানে বাদ দিয়ে যেখানেই খোঁজা হোক না কেন, কেউ তাকে পাবে না। তবে এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বলিপাড়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৈমুর হাসান খান বলেন, নাথান কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চয়ই খোঁজখবর রাখছে। তবে আমার ধারণা, যেসব সদস্য এখানে ব্যাংকগুলোয় চুরি করতে এসেছিল, তারা আসলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অন্যদিকে চলে গেছে। তারা এখানে আর নেই।

যৌথ অভিযানে কেএনএফের ৯ সদস্য আটক: এদিকে বান্দরবানের ধুপপানি ছড়া এলাকা থেকে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফের) ৯ সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবরের পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বান্দরবান রিজিয়নের ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের ধুপপানিছড়া পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সুংসাং পাড়া আর্মি ক্যাম্পের মেজর রাজীব। এসময় তারা এলাকাটি ঘেরাও করে ফেলে। সেখান থেকে ৮ কেএনএফ সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি এলজি, ১৯টি এলজি কার্টিজ, ২টি মোবাইল ফোন ও ২টি আইডি কার্ড জব্দ করা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এসব তথ্য জানিয়েছে।

কেএনএফ ২০২২ সালের গোড়ার দিকে পাহাড়ে তত্পরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় ওই বছরের অক্টোবর মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কেএনএফের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলার সময়ই ওই সশস্ত্র দলের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে চলতি বছরের ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেল পাড়ায়। শান্তি আলোচনার মধ্যেই ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ও পরদিন ৩ এপ্রিল থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে ১৭ লাখ টাকা, ২টি লাইট মেশিনগানসহ (এলএমজি) ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পরে অবশ্য তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। 

পরপর দুই উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।


মানবকণ্ঠ/এফআই