Image description

আর মাত্র চার দিন পরই ঈদুল আজহা। ইতিমধ্যেই কুরবানির পশুতে ভরে গেছে রাজধানীর হাটগুলো। নির্ধারিত সময়ের আগে সড়ক ও নৌপথে পশুবাহী বিভিন্ন যানবাহন প্রবেশ করার সুযোগে শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে পথে পথে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। 

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সঙ্গে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররাও। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি পশু হাটে গরুর বেপারি ও ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা তারা এ অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মোহাম্মদ মনির। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায়, হাইওয়েতে চালকদের হয়রানি করছে পুলিশ। চাঁদা না দিলে পশুবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যবস্থা না নিলে ট্রাক মালিকরা ট্রাকে পশু বহন করবেন না। আর পশুবাহী ট্রাক সংকট পড়লে গরুপ্রতি দাম বাড়বে ২০-৩০ হাজার টাকা।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একাধিকবার হাইওয়ে পুলিশ প্রধান, নৌপুলিশ প্রধান ও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা যা বলেন তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তারা ফিল্ডে গিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন পুলিশকে চাঁদা না দিলে কীভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।

চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, পথে চাঁদাবাজির বিষয়ে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এখনও রাজধানীতে সেভাবে পশু আসা শুরু হয়নি। এরই মধ্যে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি বলেন, চালকদের কাছে প্রতিটা জেলার বিট পুলিশের নম্বর দেওয়া আছে। পশুবাহী ট্রাক বহনের ক্ষেত্রে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও যদি চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটে তা হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবার উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৬টি স্পটে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে যশোর পর্যন্ত দুটি ও যশোর সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ১৩টি স্পটে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এসব স্পটে তিনশ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নামেও।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন হাট : শুক্রবার রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী পশুর হাটে কথা হয় ট্রাকচালক আল আমিনের সঙ্গে। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, কুষ্টিয়া থেকে এক ট্রাক গরু নিয়ে উত্তরার এ হাটে আসেন। পথে তিন স্থানে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়েছে। পুলিশের অজুহাত, রাজধানীর হাটগুলোর জন্য নির্ধারিত দিনের সেখানে গরু নেওয়া যাবে না। ঢাকায় আসার আগে কুষ্টিয়ার এক পুলিশ সদস্যই এ অজুহাতে ২ হাজার টাকা নিয়ে ট্রাক ছেড়ে দেয়। এরপর আরও দুই স্থানে ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। আরেক চালক হাসান উদ্দিন জানান, রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকার আশুলিয়ায় চাঁদা দিতে হয়েছে পুলিশকে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে পথ রোধ করে চাঁদা আদায় করছে। পশুবাহী ট্রাক দেখলেই চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। দক্ষিণখানের হাটে আসা ট্রাকচালক আবদুস সবুর জানান, তিনি রাজশাহী থেকে গরু নিয়ে এসেছেন। পথে নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের গোড়াই ফাঁড়ির সামনে পুলিশ ও কয়েকজন যুবক চাঁদা আদায় করেছেন। ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন, আফতাবনগর হাটে আসা ট্রাকচালক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, পথে পথে চাঁদা দিতে হচ্ছে পুলিশকে। চাঁদা না দিলে গাড়ির কাগজ আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি আর গরুর ট্রিপ মারব না। পথে এমন অরাজকতার সৃষ্টি করে, তা বলার বাইরে। যা কামাই করি সবই দিতে হয় পথে।


গরুর পাইকার ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন উত্তরাঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। দিয়াবাড়ীতে ৮টি গরু নিয়ে আসা খামারি সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির কারণে তার একেকটি গরু ৩-৫ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। জানতে চাইলে মাঝারি আকৃতির একটি গরু দেখিয়ে শফিকুল বলেন, ‘চাঁদাবাজি না থাকলে এ গরুটি তিনি সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু এখন এ গরুটি ৭০ হাজারের নিচে বিক্রি করলে তাকে লোকসান গুনতে হবে।’

ময়মনসিংহ ত্রিশাল থেকে আফতাবনগরে আসা ট্রাকচালক আসলাম হোসেন জানান, তিনি ১১টি মাঝারি আকৃতির গরু নিয়ে ঢাকার হাটে এসেছেন। ঢাকায় আসতে তিনি মোট সাতটি স্থানে চাঁদা দিয়েছেন।