Image description

কুরবানির ঈদ আসতে আর মাসখানেক সময় বাকি। এই ঈদকে ঘিরে সবার নজর থাকে কুরবানির পশুর দিকে। ইতিমধ্যেই খামারগুলোতে কুরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। 
 
কৃষক পর্যায়েও প্রস্তুত রয়েছে অনেক কুরবানির পশু। সব মিলে এবার দেশে কুরবানিযোগ্য পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। এবারের ঈদুল আজহাতেও কুরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। খামারি পর্যায়ে কথা বলে এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
 
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কুরবানির ঈদে দেশে পশু কুরবানি দেওয়া হয় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। আর গত বছর দেশে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশু ছিল ১ কোটি ২১ লাখ। সে হিসাবে গত বছর কুরবানি দেওয়ার পরও দেশে উদ্বৃত্ত পশু ছিল ২১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৭টি। আর এ বছর কুরবানির জন্য প্রস্তুত ১ কোটি ২৪ লাখ পশু। এবার যেহেতু নির্বাচনের বছর, তাই কুরবানি বেশি হওয়ার আশা করছেন খামারিরা। ধারণা করা হচ্ছে আসন্ন কুরবানির ঈদে ১ কোটি ২ থেকে ৫ লাখ কুরবানি দেওয়া হতে পারে।
 
এবারের ঈদকে সামনে রেখে দেশে কুরবানির পশুর সংখ্যা কেমন হবে, জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, আশা করছি এবারের কুরবানি ঈদে ১ কোটি ২৪ লাখের মতো কুরবানির পশু প্রস্তুত থাকবে। গত বছর ছিল এক কোটি ২১ লাখ। আমাদের হিসাব মতে প্রতি বছর কুরবানির পশু বৃদ্ধি পায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ। সে হিসাবে আমরা আশা করছি এবারের ঈদে ১ কোটি ২৪ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ পশু প্রস্তুত হবে। সুতরাং এবারের ঈদেও কুরবানির জন্য পশুর কোনো সংকট হবে না।’
 
এদিকে গত পাঁচ বছরে দেশে কুরবানির পশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গরু-ছাগলের সংখ্যা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল-এই ৫ বছরে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বেড়েছে ভেড়ার সংখ্যাও। তবে আশঙ্কাজনকহারে কমেছে মহিষের সংখ্যা।
 
অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ছিল ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৬টি। এরপর ২০১৯ সালে ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৪০টি, ২০২০ সালে ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ২৭৮টি, ২০২১ সালে ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯৪টি এবং গত বছর ছিল ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৫টি। অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এসে পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৩টি।
 
ছাগলের সংখ্যা ২০১৮ সালে ছিল ৬১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮টি। এরপর ২০১৯ সালে ছিল ৬৩ লাখ ২১ হাজার ১২৭টি, ২০২০ সালে ছিল ৬৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৩টি, ২০২১ সালে ছিল ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৮টি এবং ২০২২ সালে ছাগলের সংখ্যা ছিল ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি। অর্থাৎ গত ৫ বছরে দেশে ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৬৭টি। আর গত পাঁচ বছরে গরু ও ছাগলের সংখ্যা মোট বেড়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২২০টি।
 
অধিদফতর সূত্রে আরও জানা যায়, গত পাঁচ বছরে দেশে ভেড়ার সংখ্যাও বেড়েছে। জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশে কুরবানিযোগ্য ভেড়ার সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২১ হাজার ২৫২টি। এরপর ২০১৯ সালে ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৩টি, ২০২০ সালে ৯ লাখ ২৩ হাজার ৯৪৭টি, ২০২১ সালে ছিল ৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৩টি এবং ২০২২ সালে ছিল ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮২টি। অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এসে দেশে ভেড়ার সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার ৪৩০টি।
 
গরু, ছাগল এবং ভেড়ার সংখ্যা বাড়লেও দেশে আশঙ্কাজনকহারে কমছে মহিষের সংখ্যা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে মহিষের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৪টি। ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ৯ হাজার ২৬০টি। এর পর ২০২০ সালে মহিষের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭২২টি, ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ২০৬টি এবং ২০২২ সালে আরও কমে হয়, ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪টি। অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এসে মহিষের সংখ্যা কমেছে ১৫ হাজার ৬৭০টি।
 
 কয়েক বছর আগেও কুরবানির ঈদের পশুর চাহিদা পূরণের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। কারণ ওই সময়ে ভারত থেকে বছরে ২৪-২৫ লাখ গবাদিপশু দেশে আসত। এখন সেটি প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কারণ ভারত সরকার বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে।
 
ভারতের এ সিদ্ধান্তের কারণেই সারা দেশে ছোট-বড় এবং মাঝারি খামার গড়ে ওঠে। হাজার হাজার খামারি গরু-ছাগল পালন শুরু করে। তাদের কল্যাণেই দেশ আজ গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রাণিসম্পদ খাতে আমাদের দেশে এখন যে উৎপাদন হয় তাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। সে জন্য অন্য কোনো দেশের গবাদিপশুর প্রয়োজন নেই। সামনে যেহেতু কুরবানির ঈদ তাই ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে যাতে গরু না আসে দেশে সে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ‘ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় আমাদের জন্য, এ খাতের জন্য বড় উপকার হয়েছে। কুরবানির ঈদের সময় আসলে সীমান্ত পথ দিয়ে দলে দলে গরু আসত আমাদের দেশে। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না। কারণ ভারত সরকার বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তের পর দেশের আনাচে-কানাচে যেমন ক্ষুদ্র মাঝারি খামারি গড়ে উঠেছে, তেমনি অনেক বড় বড় উদ্যোক্তা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এ খাতে। গত এক দশকে দেশে অসংখ্য গরু-ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। তার সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। আমরা এখন গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘আসন্ন কুরবানির ঈদেও দেশে পশুর কোনো সংকট হবে না, বরং চাহিদার চেয়েও বেশি রয়েছে। তবে এবার কুরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে। কারণ গত এক বছরে দেশে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। এ কারণে খামারিদের পশুপালন ব্যয় বেড়েছে গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এর প্রভাব পড়বে কুরবানির পশুর দামের ওপর। সেটি হয়তো পশু প্রতি ৪ থেকে ৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারে।’