Image description

সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখন মানুষের বসবাস পৃথিবীজুড়ে এত বিস্তার হয়নি। পৃথিবীর বেশিরভাগ অঞ্চলজুড়ে জঙ্গল আর পাহাড়ে ঘেরা। গাছ-পালা ভরা অরণ্যে কত পাখপাখালি আর নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। তখন বনের রাজা ছিল হাতি। হাতি ছিল খুবই শক্তিশালী, অহংকারী, রাগী আর বদ মেজাজি। 

একদিন হাতি কলাবনে গিয়ে কলাগাছ চিবাচ্ছিলো। মস্ত বড় হাতির কি একটি কলাগাছে হয়? সে বনের অনেকগুলো কলাগাছ ভেঙে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে। ওই সময় ওই বাগানে একটি বানর কলা খাচ্ছিলো। বানর হাতির এমন কাণ্ড দেখে বলে উঠলো- ‘রাজামশাই আপনি যদি এভাবে কলাগাছ খেয়ে ফেলেন তো আমরা আর কী খাবো? এভাবে কলাগাছ নষ্ট করলে বনের তো আর কলা থাকবে না! আর কলাও হবে না। আমরা তো না খেতে পেয়ে মরে যাবো’। 

বানরের এমন কথায় হাতি রেগে গিয়ে গর্জে উঠলো। হুংকার দিয়ে বললো- ‘কি আমি বনের কলাগাছ নষ্ট করছি? আমি আমার বনের কলাগাছ খাচ্ছি। তুই একটা ছিঁচকে বানর! তোর এত বড় সাহস তুই বলিস আমি বনের কলাগাছ নষ্ট করছি! আজকে তোকে তো আমি মেরেই ফেলবো। এই বলে হাতি বানরের পিছু ছুটতে লাগলো।

হাতিকে তেড়ে আসতে দেখে বানর পালানোর জন্য দৌড়াতে শুরু করলো। এ ডাল থেকে ও ডাল ও ডাল থেকে এ ডাল বানর লাফাতে লাগলো। হাতি তো আর অত বড় মস্ত শরীর নিয়ে বেশি জোরে দৌড়াতে পারে না। বানরের মতো গাছেও উঠতে পারে না। তাই বানর যে গাছের ডালে যায় হাতি ওই গাছ ভেঙে ফেল নয়তো বা উপড়ে ফেলে। এভাবে করতে করতে বনের অনেক গাছ হাতি ভেঙে ফেললো।   

কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর বানর খুব হাঁপিয়ে উঠলো এবং একটা বিশাল বড় পুরোনো বটগাছে আশ্রয় নিল। ওই গাছে বেশ কয়েকটি কোটরছিল। তার একটা কোটরে একজন ঋষি ধ্যানে মগ্ন ছিল। হাতি বারবার ওই গাছে মাথা দিয়ে ধাক্কা মারতে থাকলো কিন্তু গাছটি ভাঙতে পারলো না। তবে হাতির ধাক্কাতে বটগাছটি বেশ নড়ে উঠলো। এতে করে কোটরে থাকা ঋষির ধ্যান ভেঙে গেল। 

ধ্যান ভাঙার পর ঋষি বাইরে বের হলো। বললো- ‘কে আমার ধ্যান ভঙ্গ করলি আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি’।  হাতি বলে উঠলো ‘মহর্ষি আমাকে অভিশাপ দিবেন না’। ঋষি বললো- ‘না তুই যে অপরাধ করেছিস  তোকে তার শাস্তি পেতেই হবে- তুই গায়ের জোরে আমার ধ্যান করার গাছকে নাড়িয়ে দিয়ে আমার ধ্যান ভঙ্গ করেছিস। আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি—তুই তোর পূর্ণশক্তি থাকার পরও তা কখনো দেখতে পারবি না।  পূর্ণশক্তি থাকার পরও তা কাজে খাটাতে পারবি না। মানুষ তোকে তার কাজে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করবে। তোর পিঠে বসে মানুষ ঘুরে বেড়াবে’। 

হাতি বললো-‘মহর্ষি আমি আপনার পায়ে পড়ি আমাকে কৃপা করেন। এমন অভিশাপ দেবেন না আমি ওই বনের রাজা। আমি মনুষ্যসমাজে গিয়ে বোঝা বইতে পারবো না। এ কাজ আমার জন্য অনেক লজ্জার। আমি এ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী’।  ঋষি বললো-‘অভিশাপ দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তোকে তোর কর্মফলের শাস্তি পেতেই হবে’।

এরপর থেকে হাতি রাজত্ব হারালো আর বনের নতুন রাজা হলো সিংহ। ঋষির অভিশাপে হাতির দুইপাশে দুইটা বড় কান গজালো। দুই বড় কান দুই পাশের পর্দার মতো ঝুলে থাকার কারণে হাতি তার মস্ত বড় শরীর আর দেখতে পায় না। হাতি বুঝতেও পারে না সেই এই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী। 

হাতি রাজ্য হারানোর পর নতুন রাজা হলো সিংহ। সিংহ বনের নতুন রাজা হয়েই হাতির ওপর অত্যাচার করতে শুরু করলো। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হাতি প্রাণবাঁচাতে লোকালয়ে চলে আসলো। লোকালয়ের শস্য, ফসলি জমি, কলাগাছ নষ্ট করতে শুরু করলো। 

হাতির এমন কর্মকাণ্ডে প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে রাজার কাছে নালিশ নিয়ে গেল। রাজা তার প্রহরীদেও হাতিকে ধরে নিয়ে আসতে বললেন। 
প্রহরীরা রাজার আদেশ পাওয়ামাত্র তখনি বেরিয়ে পড়লো হাতির খোঁজে। 

খুঁজে পাওয়ার পর হাতিকে ধরে বেঁধে নিয়ে হাজির হলো রাজদও বারে। রাজা এর আগে কখনো হাতি দেখেনি। নাদুস নুদুস হাতি দেখে রাজার পছন্দ হলো। পছন্দ হওয়ায় রাজা কঠিন শাস্তি না দিয়ে প্রহরীকে নির্দেশ দিলেন হাতিকে তার আস্তাবলে রেখে দিতে। 

এরপর থেকে মাঝেমাঝে রাজা বড় বড় অনুষ্ঠানে, রাজ্যভ্রমণে, জঙ্গলে শিকারে বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠানে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো। এভাবেই বনের রাজা হাতি রাজা থেকে রাজার বাহন হয়ে গেল। আর বনের রাজা হলো সিংহ।


মানবকণ্ঠ/এফআই