
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রতিবছর গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্সের মাধ্যমে বাসযোগ্যতাসহ কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকা তৈরি করে। ২০২৫ সালের এই তালিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই তালিকার শীর্ষে থাকা ভিয়েনাকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষ বসবাসযোগ্য শহরের স্বীকৃতি পেয়েছে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন।
তিনবছর ধরে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য শহর স্বীকৃত ভিয়েনাকে স্থিতিশীলতা, শিক্ষা ও অবকাঠামো এই তিন মানদণ্ডে টেক্কা দিয়েছে কোপেনহেগেন।
বিশ্বজুড়ে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ২০২৫ সালের এই সূচকে ধাক্কা লাগে। বিশেষ করে গত বছর ভিয়েনায় বোমা হামলার হুমকি দেখা দিলে টেইলর সুইফটের কনসার্ট বাতিল হয় এবং সম্প্রতি একটি রেলস্টেশনে পরিকল্পিত হামলাও ঠেকানো হয়। যার প্রভাব পড়ে দেশটি শীর্ষত্ব হারায়।
তবে পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডার শহরগুলো এখনও তালিকায় ভালো অবস্থানে আছে। আর এই তালিকায় একমাত্র এশীয় শহর হিসেবে শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে ওসাকা।
২০২৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে বসবাসযোগ্য শহর হলো—
১. কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
২. ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
২. জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
৪. মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
৫. জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
৬. সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
৭. ওসাকা, জাপান
৮. অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড
৯. অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া
১০. ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্সে শীর্ষ স্থানে থাকা কোপেনহেগেনকে সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী শহর হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোপেনহেগেনের উচ্চমানের স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো ও পরিবেশ সূচকই শহরটিকে এই দুটি স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
লাইভেবিলিটি ইনডেক্সে একধাপ পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এলেও অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এখনো বিশ্বের সব শহরের তুলনায় সেরা। পাশাপাশি শিক্ষা ও অবকাঠামোতেও শহরটি পেয়েছে সর্বোচ্চ স্কোর। এসব মিলিয়ে ভিয়েনা এখনো বসবাসযোগ্য হিসেবে এর বাসিন্দাদের কাছে প্রশংসিত শহর।
নীতিমালা ও অবকাঠামোর কারণে সুইজারল্যান্ড ধারাবাহিকভাবে বসবাসের মানে শীর্ষে অবস্থান করে আসছে। এ বছর শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে দেশটির দুটি শহর জুরিখ ও জেনেভা। তবে জেনেভার বাসিন্দারা বলছেন, এই শহরের নিজস্ব এক ভিন্ন রূপ আছে। এটি ছোট ও শান্ত হলেও এতে বৈশ্বিক সুবিধার কমতি নেই।
অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ শহর জেনেভার বাসিন্দাদের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ বিদেশি। শহরটি স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোতে পেয়েছে সর্বোচ্চ স্কোর। শহরটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং চলাচল সহজ। সুইজারল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য ট্রেন নেটওয়ার্ক ও ভৌগোলিক অবস্থান ইউরোপজুড়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যাত্রাকে সহজ করেছে।
লাইভেবিলিটি ইনডেক্সে চতুর্থ স্থানে থাকা মেলবোর্ন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ নম্বর। তবে শহরটি সংস্কৃতি ও পরিবেশের দিক দিয়ে সিডনি ও অ্যাডিলেডের মতো শহরকে ছাড়িয়ে গেছে। অবকাঠামোর দিক থেকেও ভালো অবস্থানে আছে মেলবোর্ন।
এশীয় শহর হিসেবে ২০২৫ সালের লাইভেবিলিটি ইনডেক্সের শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে জাপানের ওসাকা। সপ্তম স্থানে ওসাকা স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ স্কোর। যদিও টোকিওর চাকচিক্যের কারণে এটি অনেক সময় আড়ালে থেকে যায়, তবুও এই শহরটি এখানকার বাসিন্দাদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। শহরটির নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো, বিশেষ করে পরিচ্ছন্ন, সময়নিষ্ঠ ও বিস্তৃত গণপরিবহন ব্যবস্থা ওসাকাকে বসবাসযোগ্য করে তোলে, টোকিওর ভিড় এড়িয়ে ভালোমতো থাকা ও ঘোরার সুযোগ দেয়।
১৭৩টি শহরের তালিকায় সবচেয়ে কম বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে নাম লিখিয়েছে সিরিয়ার দামেস্ক। তার ঠিক এক ধাপ ওপরে রয়েছে লিবিয়ার ত্রিপোলি।
গত বছর সরকার পরিবর্তন হলেও সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এখনো গৃহযুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে যে কারণে শহরটির বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, সবচেয়ে কম বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এখন ১৭১ তম অবস্থানে। গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দেশটির অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে।
Comments