Image description

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সব জ্বরই যে ডেঙ্গু, তা নয়। তাই এই সময় ডেঙ্গু সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিবিসির এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা ডেঙ্গু জ্বরের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন।

জ্বর মানেই ডেঙ্গু নয়: এখন যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম, তাই জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেক সময় দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বরকে গুরুত্ব না দেয়া। যদি জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কিংবা অন্যান্য উপসর্গ থাকে, তাহলে তা অন্য অসুখও হতে পারে। তবুও সতর্ক থাকা আবশ্যক।

ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ: ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ হলো উচ্চমাত্রার জ্বর, যা সাধারণত ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রির মধ্যে থাকতে পারে। জ্বর স্থায়ী হতে পারে কিংবা ঘাম দিয়ে নেমে যাওয়ার পর আবার ফিরে আসতে পারে। এ ছাড়া মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরব্যাপী পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া এবং ত্বকে লালচে র‍্যাশ দেখা যেতে পারে। যদিও উপসর্গগুলো একসঙ্গে নাও দেখা দিতে পারে, তবুও এগুলোর যেকোনো একটি থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি।

বিশ্রামের বিকল্প নেই: ডেঙ্গু হলে শরীরকে যথাযথ বিশ্রাম দেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. সানিয়া তাহমিনার মতে, জ্বর নিয়ে দৈনন্দিন পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা উচিত। বিশ্রামই হলো এই সময় শরীরের প্রধান ওষুধ।

তরল খাবার: ডেঙ্গু আক্রান্ত অবস্থায় শরীর যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি। তাই পর্যাপ্ত তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি শরীরের পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

যেসব ওষুধ নয় একেবারেই: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন ইত্যাদি খাওয়া একেবারে নিষেধ। এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। প্যারাসিটামলও দিনে সর্বোচ্চ চারটি গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে কারও যদি লিভার, কিডনি বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে যেতে হবে: ডেঙ্গু আক্রান্ত সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। সাধারণত ডেঙ্গু রোগীদের তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়— ক্যাটাগরি এ, বি এবং সি।

ক্যাটাগরি এ: শুধুই জ্বর আছে, অন্য কোনো জটিলতা নেই। এ ধরনের রোগীদের বাসায় থেকেই সঠিক যত্ন ও বিশ্রামের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

ক্যাটাগরি বি: কিছু জটিলতা যেমন পেটে ব্যথা, বমি, খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।

ক্যাটাগরি সি: সবচেয়ে জটিল রূপ। এতে রক্তক্ষরণ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়া কিংবা শক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। এই ধাপে আইসিইউ সাপোর্টও প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের চাবিকাঠি হচ্ছে সচেতনতা। জ্বরকে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল পানীয় গ্রহণ এবং ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা এই কয়েকটি বিষয় মেনে চললে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে, সতর্কতাই বাঁচার একমাত্র পথ।ডেঙ্গু প্রতিরোধের চাবিকাঠি হচ্ছে সচেতনতা। জ্বরকে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল পানীয় গ্রহণ এবং ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা এই কয়েকটি বিষয় মেনে চললে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে, সতর্কতাই বাঁচার একমাত্র পথ।