Image description

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক আসামি মোন্তাজ আলী বেপারী ওরফে মমতাজকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গত শনিবার মধ্যেরাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ১৯৭১ সালে হত্যা গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ চারটি অভিযোগ আনা হয় গাইবান্ধার মমতাজের বিরুদ্ধে। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় ২০১৯ সালে মমতাজসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে, ২০০৯ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তারা জামিনে ছিলেন। পরে মামলার বিচার কাজ শুরু হলে পালিয়ে যান।

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের একই মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৪ টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত তালিকা মোতাবেক মমতাজ জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা সদর এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সেই মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামী আব্দুল জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। জব্বারের সাথে যোগসাজসে  মমতাজ শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে অত্র এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতেন।

তিনি আরও বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে মমতাজ, রনজু, জব্বার, জাছিজার ও ওয়াহেদ মিলে গাইবান্ধা সদরের নান্দিনা গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালান। সেই হামলায় তারা ওই গ্রামের আবু বক্কর, তারা আকন্দ, আনছার আলী এবং নছিম উদ্দিন আকন্দকে সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। ওই সময় তাদের নেতৃত্বে একই গ্রামের সামাদ মোল্লা, শাদা মিয়া, ফরস উদ্দিন ও সেকান্দার আলী মোল্লাকে বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়। পাশাপাশি সেই দিনে ধৃত মমতাজের নেতৃত্বে তারা ৪০ টিরও অধিক বাড়িঘরে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে সেগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে। যা পরে  আদালতে প্রমাণ হয়। একই দিনে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন এবং নবীর হোসেনসহ মোট সাতজনকে গুলি করে হত্যা করে। ২০০৯ সালে মমতাজসহ ৫ জনকে বাদী করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা হয়। পরে তিনি  ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকেন। এরপর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আসেন ঢাকায়। ২০১৬ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন তিনি কখনই আদালতে হাজিরা দেননি। এরই মাঝে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় দেন।

 জামাই ও ছেলের বাসায় আত্মগোপন:

মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি নিজ বাড়ি ছেড়ে গাইবান্ধা সদরে তার জামাতার বাড়িতে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে তার বড় ছেলে শফিকুল ইসলামের ভাড়া বাসায় আসা যাওয়া করতেন। তার ছেলের ভাড়া বাসাটি নিজ জেলা থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে বেশি নিরাপদ ভেবে পরে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের দিকে স্থায়ীভাবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকায় ছেলের বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন। সেই বাসা থেকে শনিবার রাতে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।