Image description

শেষ হলো তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা। শেষ দিনেও প্রযুক্তিপ্রেমীদের ভালো উপস্থিতি ছিল মেলা প্রাঙ্গণে। প্রযুক্তিকে জানতে প্রতিটি স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছে সবাই। মেলায় আগতের মধ্যে অনেকেরই আগ্রহ ছিল ফাইভ-জি নিয়ে। তবে অভিযাগ ছিল ইন্টারনেটের গতি ও নেটওয়ার্কের মান নিয়ে। যদিও এবারের মেলায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া পেয়েছে বলে মনে করছে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।

আইসিটি ইকোসিস্টেম অংশীজনদের অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনের মেলার আয়োজন করেছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। মেলার বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে ছিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। মেলায় আইসিটি কোম্পানি, টেলিকম অপারেটর, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট এবং অবকাঠামো পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ ১৩৬টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।


শনিবার শেষ দিনে সকাল থেকেই জমজমাট ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ মেলা প্রাঙ্গণ। প্রায় প্রতিটি প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সংযুক্তির মহাসড়ক’ সেøাগানে চলা এ মেলায় শিক্ষার্থীসহ প্রযুক্তিপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক, সরকারি মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটক, সেবরকারি অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের স্টলে দর্শনার্থীদের ফাইভ-জি প্রযুক্তির সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দিতে দেখা গেছে। 

মেলায় আগত গ্রাহকরা বলেছে, যদি ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি না করা যায় তা হলে কোনো প্রযুক্তি বা ডিভাইসেরই ভালো ব্যবহার করা যাবে না। উত্তরার থেকে মেলায় আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আসিফ হোসাইন সময়ের আলোকে বলেন, বিশ্ব এখন প্রযুক্তিনির্ভর। 

তাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদেরকেও বদলাতে হবে। তাই মেলায় প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে এসেছি। অনেক কিছুর সম্পর্কে জানতাম না, এখানে এসে জানতে পারলাম। তবে আমার মনে হচ্ছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উপাদান হলো ইন্টারনেটের ভালো গতি ও নেটওয়ার্ক। মানসম্মত নেটওয়ার্ক ছাড়া ভালো প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে না। এখন একটা স্মার্ট ফোন দিয়ে সবকিছু করা যায়। সেখানে যদি ভালো নেটওয়ার্ক না থাকে তাহলে লাভ কী? একটা দামি ফোন নিলাম, কিন্তু যদি কথা বলতে না পারি ফোন কিনে কী হবে। বিভিন্ন অপারেটর তাদের অফার ও সুযোগ সুবিধার কথা বলছে, কিন্তু আমার ডাটার ভালো স্পিড না থাকলে কী হবে এত অফার দিয়ে। কারণ এখনও কথা বলতে গেলে কলড্রপ হয়। একটা ভিডিও দেখলে বারবার লোডিং হয় বাফারিং হয়। তাই নেটওয়ার্ক মান উন্নয়নে আগে জোর দিতে হবে। আমি জানতে এসেছি ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে আমরা কী কী সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ পাব বা স্পিড কেমন পাব, কবে থেকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারব ইত্যাদি।

এদিকে মেলায় আগত গ্রাহকদের পছন্দে ‘গোল্ডেন নম্বর’ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বিভিন্ন প্রযুক্তি ও কার্যক্রম তুলে ধরছিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা ‘নগদ’ নিজেদের বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করছে চীনা ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। 


এবারের মেলায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া পড়েছে বলে জানান আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে ফাইভ-জি প্রযুক্তি জানাতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি। মেলার শেষ দিনেও দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। আমাদের টার্গেটের চেয়ে অনেক বেশি দর্শক হয়েছে। এটি একটি সফল মেলা। আগে ইনোভেটরদের জন্য কোনো জোন ছিল না। এবার তাদের জন্য জোন রাখা হয়েছে। ৬০ জন ইনোভেটর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে তাদের প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে। এখানে নতুন নতুন অনেক ইন্টারেস্টিং প্রজেক্ট আছে। অনেকেই ফাইন্ডিং করবে সেসব জায়গায়। এই ইনোভেটরদের কাছ থেকে আমরা যদি ৫-১০টা প্রজেক্টও নিতে পারি তা হলে আমাদের নিজস্ব ইনোভেশন অনেকটা এগিয়ে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমাদের নতুন প্রজন্মকে যেসব প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে এখানে সবই একত্র করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মেলার ভেতরে ৭৭টি ও বাইরে ৫৯টি স্টল রয়েছে। মেলায় বিক্রির কোনো অপশন ছিল না। এটা শুধু প্রদর্শনীর জন্য। এখানে সরকারের কোনো অর্থায়ন ছিল না। তাই আয়-ব্যয়ের কিছু নেই। আমাদের শুধু বিটিআরসি থেকে ভেন্যুটা দিয়েছে। বাকি খরচ আমরা ১৬টি স্পন্সর থেকে নিয়েছি। 

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সময়ের আলোকে বলেন, নিজের আয়োজন করা মেলা নিয়ে নিজে মূল্যায়ন করব না। আমি মানুষের কাছ থেকে মূল্যায়ন শুনব। আমি ৮৯ সাল থেকে মেলা করছি। মেলায় কী হয় এটা আমার উপলব্ধি আছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগে মেলার প্রচলনটা আমি করছি। এই প্রথম মেলার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে আমার টেকনোলজি ও জবাবদিহিসহ আয়োজন করেছি। ভালো-মন্দ হয়েছে কি না জানি না, মেলা করার দরকার ছিল করেছি। আমি এর বেশি মন্তব্য করব না।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, সাধারণ মানুষের ফাইভ-জিতে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। কারণ গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবা মিলছে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় দ্রুত গতির ইন্টারনেট ও ফাইভ-জির বিকল্প নেই। ২০২১ সালে ফাইভ-জি উদ্বোধন করে টেলিটক এখন আইসিউতে। আলোর মুখ দেখবে কি না সন্দেহ আছে। থ্রি-জি বন্ধ, ফোর-জিও ভালো কাজ করে না। অথচ ৫০টি দেশে ফাইভ-জি চালু হয়েছে। কিন্তু আমাদের তাদের আগে করার কথা। সরকারের ইচ্ছে আছে। তবে নেতৃত্বের অভাবে ফাইভ-জি এখনও চ্যালেঞ্জের বিষয়। কোনো ইন্ডাস্ট্রি এখনও টেলিটকের ফাইভ-জি ব্যবহার করতে পারেনি। তিনি বলেন, ফোনে ইন্টারনেট না থাকলে ফোনের ব্যালেন্স দেখা যায় না, মানি ট্রান্সফার করা যায় না। এগুলোর জন্য উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট দরকার হয়। মেলায় শুধু কয়েকটি রোবট এনে দেখালেই মেলা সার্থক হয় না। নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই।