Image description

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। ছবি: সময়ের আলো

প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক দলের আয়োজনে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যেই রূপকল্প গ্রহণ করেছিল আওয়ামী লীগ, সেটি ২০২১ সালে পূর্ণতা লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে যাত্রা এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন’ শীর্ষক বিষয়ে আলোচনা হয়। এর-পর থেকেই স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণায় কাজ শুরু হয় দেশজুড়ে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফরহাদ শিকদার।

প্রশ্ন : চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ফোর আইআর আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মতো কার্যক্রম নিয়ে কী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের?

আবদুস সবুর : চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এমন উদ্যোগ নিয়ে অবশ্যই ভবিষ্যতে আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। 

আওয়ামী লীগের সৃষ্টিলগ্ন থেকে আমরা সবসময় চেয়েছি বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা, যা আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পেয়েছি। তিনি সবসময় রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য কাজ করেছেন। তিনি যখন শহিদ হন তখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯-এর ওপরে ছিল। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা চতুর্থ বারের মতো এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে খুব নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সময়কে ধারণ করে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটি গঠন করেছেন। তিনি দেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ উপ-কমিটি গঠন করেছেন। তার দিকনির্দেশনায় ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন কর-ার কথা বলেছিলেন এবং আজ তা বাস্তবায়িত। তিনি এবং তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনাতেই আগামী দিনের বাংলাদেশ কী হবে সেসব চিন্তা করে বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

আমরা অনেক টাস্কফোর্স করেছি। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছি। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন সেমিনার করেছি এবং বি-িভন্ন বিষয়ক রিকমেন্ডেশন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। তিন মাস আগে আন্তর্জাতিক ফোর আইআর সেমিনার করি; যা বিশ্বের বুকে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল করেছে। ইন্টারন্যাশনাল গণমাধ্যমগুলো এ সংবাদ প্রকাশ করেছে। যেখানে আমাদের দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করেছি এবং অনেক বিষয় খুঁজে বের করেছি। ডিজিটাল, স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ৬৬২টি পেপার জমা হয়েছে বিদেশ থেকে; বিশেষ করে বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এসব পেপার্স থেকে যেসব রিকমেন্ডেশন পেয়েছি সেগুলো থেকে যে জার্নাল বের করেছি সেগুলো প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি। আমাদের দফতর এবং সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যদের দিয়েছি। আমাদের দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লার্নিং ইনিস্টিটিউশনে দিয়েছি এসব পেপার্স, যেন এর আ-উটকাম থেকে ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য কাজ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ৪টি পিলারের পরবর্তী ধাপ হিসেবে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আনুষঙ্গিক উপকরণ রয়েছে। সেগুলো যদি প্রয়োগ করতে পারি তাহলে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারব।

দেশের যত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলোর সঙ্গে সংযোগ করেছি এবং সেখানকার শিক্ষক, গবেষণাবিদ, প্রফেশনালিস্ট সবাই সংযুক্ত হয়েছেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী পেপার্সগুলো সাহায্য করবে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকবে বিশ্বের লেটেস্ট টেকনোলজিগুলো কন্টিনিউ আপডেট করার জন্য। আগামী প্রজন্ম অনেক অগ্রগামী এবং তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে।

প্রশ্ন : আইবির সঙ্গে আপনার দীর্ঘ পথচলা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বক্তব্য হোক বা অন্য যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য দিতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড পরামর্শ দেন এবং শিক্ষা খাত নিয়ে কথা বলেন যে কীভাবে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। আমাদের শিক্ষা খাত প্রযুক্তিনির্ভর গড়ে তোলার জন্য কী রকম পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন?

আবদুস সবুর : জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এরই মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর একটি সমাজ গড়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেই বাংলাদেশ এই অবস্থায় আসতে পেরেছে। তাই সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত আজ আমরা। প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এবং অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছেন। 

অর্থাৎ বিজ্ঞানভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং উদ্ভাবনীর দেশ তৈরি করাই হলো আমাদের আগামী দিনের উদ্দেশ্য। এই জায়গাগুলো যদি আমরা এড্রেস করতে পারি তাহলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শিল্প বিপ্লবের দিনে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান সেখানে অবশ্যই আগামী প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ছাড়া আমাদের এগোনো সম্ভব নয়। আমি মনে করি আগামীদিনে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সাইন্স ডিপ্লোম্যাসি বা টেকনোলজিক্যাল ডিপ্লোম্যাসি। বর্তমান প্রজন্ম আগামী প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়েই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সক্ষম হবে।

প্রশ্ন : আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর বড় সফলতা হিসেবে কোন বিষয়টিকে দেখছেন?

আবদুস সবুর : আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কাজ করা। সেটি আমরা করে যাচ্ছি। সঠিক ইতিহাস জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য সেমিনার, ওয়ার্কশপ করে কানেক্টিভিটি তৈরি করে কমন প্ল্যাটফর্ম করেছি। যেকোনো তথ্য আমরা সেকেন্ডের মধ্যে বের করতে পারছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সচেতনতা তৈরি এবং গুজব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কাজ করছি। এ ছাড়াও বিগত দশকজুড়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য অর্জন রয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি প্রযুক্তি উপ-কমিটিতে যুক্ত আছেন, পাশাপাশি আপনি কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আপনি কেন সংসদ সদস্য হতে চাইছেন এবং আপনার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য কী করতে চাইছেন?

আবদুস সবুর : রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সবারই ইচ্ছা থাকে পার্লামেন্টে যাওয়ার। ওখানে গেলে কাজের গতি আরও বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে দায়বদ্ধতাও আরও বৃদ্ধি পায়। আমি মনে করি দাউদকান্দি-মেঘনার জনগণ অত্যন্ত সচেতন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনেক অবদান রয়েছে। তারা অত্যন্ত প্রগতিশীল। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়ন অনেক হয়েছে। তারপরেও যেসব দুর্গম জায়গা উন্নয়নে কিছুটা পিছিয়ে আছে সেখানে আমার লক্ষ্য থাকবে আগামী প্রজন্মের জন্য শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা, মাদকমুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা যেন ঠিকমতো থাকে, আর বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা। 

সে ক্ষেত্রে আমি বলব যে, আমাদের যেহেতু নিচু এলাকা, বর্ষাকালে প্রায় ৪ মাসের বেশি সময় পানি থাকে। সেসব জায়গা যদি বাঁধের ভেতর নিয়ে আসতে পারি তাহলে প্রায় ৩ ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব হবে। ফলে জিডিপিতে একটা বিরাট অবদান রাখা সম্ভব, উন্নয়নে একটা ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব। কারণ অনেক ইপিজেড হচ্ছে। যেহেতু দাউদকান্দি ঢাকার অনেক কাছে, সেখানে যদি নৌবন্দর তৈরি করা যায় তবে ঢাকা থেকে যাওয়া-আসা করতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। এ ছাড়াও সামনে যেহেতু সিক্স  লেন করার পরিকল্পনা রয়েছে সেহেতু সেখানে মানুষের কর্মসংস্থান করা, শিক্ষাব্যবস্থা করা এবং বাঁধের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।