Image description

ময়মনসিংহে নির্মিত হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত হাইটেক পার্ক। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তিন হাজার মানুষের। প্রতিবছর বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে এক হাজার তরুণ-তরুণী। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থমকে যায় চলমান প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। সাতমাস কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় ধীরগতিতে চলছে পার্কটির কাজ। স্থানীয়রা বলছেন, গতি ফিরিয়ে দ্রুত সম্পন্ন করা হোক নির্মাণ। 

২০২২ সালের জুন মাসে ময়মনসিংহ নগরের কিসমত এলাকায় ছয় দশমিক এক একর জমিতে হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রু (এলঅ্যান্ডটি) এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান 'ভয়েন্টস সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড'। সাততলা বিশিষ্ট প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৫৩ কোটি টাকা। প্রতিতলায় জায়গা থাকবে ১৫ হাজার বর্গফুট। এর আগে ২০১৭ সালে দরপত্র আহবান করা হয় পার্কটির। কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল ২০২৪ সালের জুনে। পরে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। ২০২৫ সালের জুনেও কাজ শেষ করতে না পেরে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে কাজ করার সুযোগ পেলে সম্পন্ন হতে সময় লাগবে আরও এক বছর। 

সরেজমিন গিয়ে দেখাযায়, সাততলা বিশিষ্ট বিশাল পার্কটির নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৫০-৬০জন শ্রমিক। যেখানে আড়াইশো থেকে তিনশ শ্রমিক কাজ করার কথা ছিল। রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ভারী নির্মাণ সামগ্রী।

গত ৩০ জুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান 'ভয়েন্টস সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড' কাজ পেলে ভারতে চলে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, পূর্বের ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। তবে দ্রুত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না করা হলেও বন্ধ হয়ে যাবে কাজ। 

প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) মোস্তাক আহমেদ বলেন, সরকার পরিবর্তন হলে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কাজ ফেলে চলে যায় ভারতে। তখন প্রায় সাতমাস কাজ বন্ধ ছিল। পরিবেশ-পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার কাজ শুরু হয়। তবে সেটা অনেকটাই সীমিত পরিসরে। যেখানে তিনশ শ্রমিক কাজ করত সেখানে করছে ৫০-৬০ জন। এখন নতুন করে উদ্বেগের কারণ হল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়া। তবে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারলে এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে পড়বে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলএন্ডটি'র প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, এই প্রকল্পটিতে আমি নতুন যোগদান করেছি। সবকিছু বুঝতেও একটু সময় লাগছে। কাজ ধাপে ধাপে শুরু করা হচ্ছে। পুরোদমে শুরু করতে পারবে এক বছরের মধ্যে সরকারকে বুঝিয়ে দিতে পারব। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল মুমিন খান বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্টান ভারতে চলে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। কাজটি পুরোপুরি ভাবে সম্পন্ন করতে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছি। তারা কাজে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশা করছি দুয়েক মাসের মধ্যে চলেও আসবে।

কিসমতপুর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, এখানে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। প্রকল্প শুরুর দিকে জায়গা-জমি নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা আগ্রহভরে জমি দিয়েছি। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে কর্মযজ্ঞ শুরু হবে সেটাই চাচ্ছি। 

আনন্দ মোহন কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবু সাঈদ আহমেদ বলেন, বর্তমানে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। আইটি পার্কের কাজ সম্পন্ন হলে সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে জীবনকে সাজাতে চাই। আমার মত অনেক তরুণের স্বপ্ন হাইটেক পার্ক। কোন কারণে যেন কাজের গতি না হারায়, সরকারকে সেদিকে বিশেষ নজর রাখার জন্য আহবান জানাচ্ছি।