
২০২৫ শুরু হতে না হতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের হিরিক পড়ে গেছে। এই ক’দিন আগেই উন্মোচিত হলো ‘স্টারগেট’ প্রজেক্টের, যেখানে এআই অবকাঠামো নির্মাণে ওপেনএআই, ওরাকল ও জাপানের সফটব্যাংক যৌথভাবে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছে। এবার জানা গেল, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটা এ বছরই নিজেদের এআই অবকাঠামোর উন্নয়নে ৬৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করতে পারে।
বাংলাদেশী মুদ্রায় অর্থের অংকটা ৭ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকারও বেশি- যেটা বাংলাদেশের বর্তমান বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) প্রায় সমান!
ওপেনএআই ও গুগলের সাথে প্রতিযোগীতায় নিজেদেরকে এগিয়ে রাখতেই এআই অবকাঠামো’তে বিশাল অংকের অর্থ খরচ করতে চাইছে মেটা। এআই প্রযুক্তি’র উন্নয়নে দক্ষ কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে ২-গিগাওয়াটের চেয়েও বেশি সক্ষমতার একটি বিশাল ডেটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। মেটার লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যেই তাঁদের ডেটা সেন্টারে ১.৩ মিলিয়ন গ্রাফিক্স প্রসেসর নিয়ে আসা এবং অনালাইন সেবায় ১ গিগাওয়াট সক্ষমতার কমপিউটিং পাওয়ার কাজে লাগানো।
সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে মেটার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ‘এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে। এটি একটি বিশাল উদ্যোগ এবং আগামী বছরগুলোতে এটি আমাদের মূল পণ্য ও ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
এআই খাতে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগীতার প্রেক্ষাপটে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অংকের বিনিয়োগে আশ্চর্য হবার দিন শেষ। চ্যাটজিপিটি নিয়ে ওপেনএআই’র আবির্ভাবের মাধ্যমে এআই নিয়ে যে উন্মাদনার শুরু সেটাই পর্যায়ক্রমে অনেক বেশি গোছালো, প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে বিগত দু’বছরে।
স্বাভাবিকভাবে এআই’তে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে হু হু করে। স্টারগেট ও মেটা ছাড়াও চলতি মাসে আরও দুটি শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন ডলার এআই বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ওপেনএআই’তে বড় অংকের বিনিয়োগ থাকলেও মাইক্রোসফট নিজেদের এআই সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। তাইতো চলতি বছর তাঁরা ৮০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এআই ডেটা সেন্টার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। আরেক ‘বিগ টেক’ অ্যামাজনই বা পিছিয়ে থাকবে কেন। তাঁরাও জানিয়েছে চলতি বছর এআই’তে তাঁদের বিনিয়োগ গত বছরের ৯৫ বিলিয়ন ডলারকেও ছাপিয়ে যাবে।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডি.এ. ডেভিডসন-এর বিশ্লেষক গিল লুরিয়া বলেন, ‘জাকারবার্গ এমন একটি মার্কেটের দিকে ইঙ্গিত করছে যেখানে এআই প্রতিযোগীতায় সে দ্বিতীয় হতে চায় না।’ তিনি মনে করেন যে, ঠিক এই সময় এআই খাতে মেটার বিনিয়োগ নিয়ে জাকারবার্গের এই ঘোষণা স্টারগেট প্রজেক্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
এআই প্রতিযোগীতায় নিজেদের এআই চ্যাটবট নিয়ে বড় প্লেয়ার হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে মেটা। চ্যাটবটের পাশাপাশি মেটা’র এমন কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলো ওপেনএআই, মাইক্রোসফট ও গুগলের নেই। সেটা হলো, রে-ব্যান স্মার্টগ্লাস (স্মার্ট চশমা)। এআই প্রযুক্তি’র উন্নয়নে ওপেন-সোর্স কৌশলে এগোচ্ছে মেটা- এটাও তাঁদেরকে এআই’র শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে আলাদা করেছে। ওপেনসোর্স কৌশলের অংশ হিসেবে মেটা তাঁদের তৈরি লামা এআই মডেলকে বিনামূল্যে সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ফলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে লামা এআই মডেল ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন এআই টুল ও ফিচার তৈরি করে নিতে পারে।
জাকারবার্গ বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে মেটার এআই অ্যাসিসট্যান্টের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে- যেটা গত বছরও ছিল ৬০০ মিলিয়ন। উল্লেখ্য, গত বছর তাঁদের বিনিয়োগ ৩৮ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার ছিল, যেটা এ বছর ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে চলেছে।
ওপেনএআই-এর পর গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যামাজন সকলেই যোগ দিয়েছে জেনারেটিভ এআই’র মাঠে। সাথে ইলন মাস্কের এক্সএআই’র মতো বেশ কিছু স্টার্টআপও এআই খাতে এসেছে ভবিষ্যৎমুখী উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে। ফলে এআই’তে কোলাহল বাড়ছে এবং এই ধারা সামনেই দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে, এমনটা এখন বেশ অনুমেয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments