Image description

দেখতে দেখতে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তে উপনীত বিশ্ব। হাতছানি দিচ্ছে নতুন বছর। বছরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনেকেই চোখ বোলাচ্ছেন ফেলে আসা দিনগুলোয়। মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এ বছরও যুক্ত হয়েছে অনেক কীর্তি ও গৌরব। বিদায়ি বছরের আলোচিত কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন আরিফ খান সাদ


প্রভাবশালী পাঁচশ মুসলিমের তালিকা প্রকাশ

বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী পাঁচশ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করেছে জর্ডানের আম্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার’। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষ ৫০ প্রভাবশালী মুসলিমের নাম ধারাক্রমে উল্লেখ করা হয়। তন্মধ্যে বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভারতের জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি এবং বর্ষসেরা নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান অনুবাদক আয়েশা আবদুর রহমান বিউলির নাম ঘোষণা করা হয়। তালিকায় প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের শীর্ষে রয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও পাকিস্তানের খ্যাতনামা মুফতি আল্লামা তকি উসমানি। 


তাছাড়া ৪৫০ জনের নাম ১৩টি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান বিবেচনায় উল্লেখ করা হয়। ক্ষেত্রগুলো হলো- পাণ্ডিত্ব, রাজনীতি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ধর্ম প্রচার ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা, দাতব্যসেবা ও উন্নয়ন, প্রযুক্তি, সামাজিক ইস্যু, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্প ও সংস্কৃতি, কুরআন তেলাওয়াত, মিডিয়া, সেলিব্রেটি ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। 


কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি হাফেজের বিশ্বজয়

আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বজয় করেছেন বাংলাদেশি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৪২তম বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ১১১টি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি। ২১ সেপ্টেম্বর মক্কার হারাম শরিফে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাকে ১ লাখ রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা) পুরস্কার ও সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে দেশে ফেরার পথে ঢাকা বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক মানুষ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। হাফেজ সালেহ আহমদ তাকরিম ঢাকার মিরপুরের মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং তার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ভাদ্রা গ্রামে।


করোনা-পরবর্তী সময়ে ১০ লাখ মানুষের হজ

পালনকরোনার কারণে সারা বিশ্বে সবকিছুর মতো হজ পালনও সীমিত হয়ে আসে। ২০২০-২১ দুই বছর শুধু সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বল্পসংখ্যক মানুষকে হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ২০২২ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মোট ১০ লাখ মানুষের হজ পালনের সুযোগ তৈরি করে সৌদি আরব। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন হজ পালন করে আসেন। উল্লেখ্য, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। তখন বাংলাদেশ থেকে সোয়া লাখেরও বেশি মানুষ হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। 


৪০ লাখ মানুষের ওমরাহ ভিসা

২০২২ সালে ওমরাহ মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০ লাখ মানুষ ওমরাহ ভিসা করার সুযোগ পেয়েছেন। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে আরব নিউজ ও সাবাক ওয়েবসাইট। করোনা মহামারির পর এ বছরই বৃহৎ সংখ্যায় ওমরাহ পালন করার সৌভাগ্য লাভ করলেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এ ছাড়া এই বছরই প্রথম পবিত্র হজের খুতবা বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় সৌদি আরবের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে লাইভ অনুবাদ সম্প্রচার করা হয়। অনেক বেশি শ্রোতার কাছে সংযম ও সহনশীলতার বার্তা পৌঁছে দিতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার।


কাতার বিশ্বকাপে ইসলামের বার্তা প্রচার

ফিফা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার কাতারের ব্যয় ২২০ বিলিয়ন, টাকায় যা প্রায় ১৮ লাখ ৯৭ হাজার কোটি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত কাতার। তাই বিশ্বকাপের সাজ ও আলোকসজ্জাতেও রাখা হয়েছে মুসলিম সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের ছোঁয়া। কাতারের রাজধানী দোহাসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বনবী (সা.)-এর বাণী সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন। ইসলামিক ক্যালিওগ্রাফি ও ম্যুরাল শোভা পেয়েছে স্টেডিয়ামগুলোর আশপাশে। দর্শকদের সবচেয়ে বেশি নজর  কেড়েছে বিভিন্ন স্থানে দেয়ালজুড়ে সাঁটানো বর্ণিল ম্যুরাল, ব্যানার ও ফেস্টুন। উন্মুক্ত স্থানে নামাজের ব্যবস্থা, ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ও অবগতি অর্জনে ভ্রাম্যমাণ সেন্টার স্থাপন, মুসলিম স্কলারদের দাওয়াত ও বিভিন্নভাবে ইসলামের সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্য প্রচারের সুযোগ হিসেবে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে কাতার।


ইরানে হিজাব নিয়ে বিক্ষোভ

ইরানে হিজাবের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। দেশটির ইসলামি ‘নৈতিকতা পুলিশ’ নামে পরিচিত গাইডেন্স প্যাট্রোল বাহিনী মাসা আমিনি নামে ২২ বছর বয়সি এক তরুণীকে ১৪ সেপ্টেম্বর ‘অপূর্ণাঙ্গ পর্দা (হিজাব)’ সম্পর্কিত একটি পোশাক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেফতার করে। দুদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশ হেফাজতে মারা যান। তার জানাজার পর ইরানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।