
ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে ইউরোপ মহাদেশ। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, তুরস্কসহ অন্তত ১৫টি দেশে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রার তাপ সতর্কতা। এর মধ্যে ফ্রান্সের ১৬টি অঞ্চলে 'রেড অ্যালার্ট' ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার, যা পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই তাপপ্রবাহ আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের ১৬টি অঞ্চলে কার্যকর হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা 'রেড অ্যালার্ট'। এছাড়াও ৬৮টি অঞ্চলে জারি রয়েছে কম ঝুঁকির 'অরেঞ্জ অ্যালার্ট'। দেশটির জলবায়ু মন্ত্রণালয় বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতিকে 'নজিরবিহীন' বলে অভিহিত করেছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাবে দক্ষিণ কর্বিয়েরেস পর্বতমালায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ মোটরওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইতালির ২১টি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। রোম, মিলান, ভেনিস ও সার্ডিনিয়া দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষ তাপপ্রবাহজনিত জ্বর, হিটস্ট্রোক এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। জরুরি চিকিৎসা বিভাগের সহ-সভাপতি মারিও গুয়ারিনো জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকের হার অন্তত ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্পেনে এবারের জুন মাস দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পর্তুগালের লিসবনসহ সাতটি জেলাতেও সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে তাপমাত্রা ৩৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
তুরস্কের ইজমিরে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে এবং ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনেগ্রো, গ্রিস এবং সার্বিয়ার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এথেন্সের আশেপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
জার্মান আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এর ফলে রাইন নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে, যা পণ্য পরিবহন ব্যাহত করছে এবং পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এড্রিয়াটিক সাগরে বিষাক্ত 'লায়নফিশ' দেখা যাচ্ছে এবং হিমবাহ দ্রুত গলতে শুরু করেছে, যা পরিবেশের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, "তাপপ্রবাহ আমাদের জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অধিকার হুমকির মুখে ফেলছে। এখনই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো ছাড়া বিকল্প নেই।"
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন যে, গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী অতিরিক্ত তাপ ধরে ফেলছে। এর ফলে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ আকারে ফিরে আসবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments