গাজার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যার ঘটনায় স্বাধীন ও তাৎক্ষণিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সোমবার (২ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি এই ঘটনার কঠোর নিন্দা জানান এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি করেন।

গুতেরেস বলেন, "রবিবার গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। আমি এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি এবং দোষীদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানাচ্ছি।"

রবিবার (১ জুন) যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত রাফা কেন্দ্র থেকে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়। রেড ক্রস জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৭৯ জন হতাহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। তবে হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা ৩১।

মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তাদের দলগুলোও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

এমএসএফ আরও জানিয়েছে, রোগীদের ইসরাইলি ড্রোন, হেলিকপ্টার, ট্যাংক এবং সেনারা চারদিক থেকে গুলি চালিয়েছে। এই ঘটনায় তাদের এক কর্মীর ভাই বিতরণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করার সময় নিহত হয়েছেন।

রাফার এক সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, জিএইচএফের সাইটের কাছে রাফার আল-আলম গোলচত্বরের কাছে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছিল, তখন ইসরাইলি ট্যাংকগুলো এগিয়ে এসে গুলি চালায়। রবিবার সকালে অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে ফিলিস্তিনিরা বালুর মধ্যে একটি খোলা জায়গায় লুকিয়ে আছে এবং স্বয়ংক্রিয় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বা ভেতরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এই ধরনের প্রতিবেদন "মিথ্যা"।

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রবিবার বিকালে এক বিবৃতিতে বলেছে যে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে তাদের সেনারা গুলি চালায়নি। মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন হামাসের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর এবং গাজার জনগণকে সেই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য "স্পষ্ট ও সহিংস চেষ্টা" করার অভিযোগ করেছেন।

জিএইচএফও জানিয়েছে যে, প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ "বানোয়াট" এবং তাদের স্থাপনায় বা তার কাছাকাছি কোনো হামলার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের করা মন্তব্যকে "অপমানজনক" হিসেবে আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে করা এক পোস্টে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে হামাসের কথা উল্লেখ না করার জন্য তার সমালোচনাও করেছে দেশটি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) জানিয়েছে, রাফায় রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে সেই সময়ে ১৭৯ জন ব্যাপক হতাহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এবং ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। সব রোগী জানিয়েছেন যে তারা সাহায্য বিতরণ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।