
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর রেড স্কোয়ারে বিজয় দিবস উদযাপনে অংশ নিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ বছরে প্রবেশের প্রেক্ষাপটে এ বছর ছিল প্যারেডে নিরাপত্তার কড়াকড়ি, নাটকীয় কূটনৈতিক উপস্থিতি এবং ড্রোনসহ আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের প্রদর্শনী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনুষ্ঠানে ভাষণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি টেনে বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘সত্য ও ন্যায় আমাদের পক্ষে। পুরো দেশ, সমাজ ও জনগণ ইউক্রেনে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সমর্থন করে।’
শি জিনপিং-এর উপস্থিতিকে পুতিনের জন্য কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, চীন-রাশিয়া সম্পর্ক বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। প্যারেডে ১০০ জন চীনা সেনা মার্চ করেছেন, আর শি জিনপিং পরেছেন রাশিয়ার সামরিক গৌরবের প্রতীক ‘সেন্ট জর্জ রিবন’, যা প্রতিবেশী অনেক দেশে নিষিদ্ধ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাশিয়া তিন দিনের একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও ইউক্রেন তা ‘নাটকীয় প্রদর্শনী’ হিসেবে বর্জন করেছে। কিয়েভ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শুরুর পর থেকেই রাশিয়া হাজারো হামলা চালিয়েছে। পাল্টা অভিযোগে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেন শত শত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, তবে তারা প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে মাত্র।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা এখন পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, তবে তা হতে হবে বাস্তব—কোনও ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলা বা সশস্ত্র আক্রমণ ছাড়া।
জেলেনস্কি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অন্তত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি শান্তির পথে একটি বাস্তব পদক্ষেপ হবে। তিনি এ প্রস্তাব নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান।
প্রথমবারের মতো রাশিয়ার বিজয় দিবস প্যারেডে ড্রোনবাহী ট্রাক অংশ নেয়। এসব ড্রোন বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্যারেডে ইয়ার্স ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানসহ রুশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়।
মাঠে ছিলেন ১১ হাজার সেনা, যাদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ইউক্রেনে যুদ্ধ করেছে। মস্কোর কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কঠোর, বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় হাজারো যাত্রীর যাত্রা ব্যাহত হয়েছে। প্যারেডের পূর্বে রাশিয়ার পদাতিক বাহিনীর প্রধান ওলেগ সালিউকভ সেনাদের নেতৃত্ব দেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোসোভ তাদের পরিদর্শন করেন।
উল্লেখযোগ্য ছিল উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও মঙ্গোলিয়ার সামরিক প্রতিনিধি দলগুলোর অংশগ্রহণ। যদিও উত্তর কোরিয়ার সেনারা মার্চ করেনি, প্রেসিডেন্ট পুতিন ব্যক্তিগতভাবে উত্তর কোরিয়ার তিন তারকা জেনারেল কিম ইয়ং-বককে অভ্যর্থনা জানান। ইউক্রেনের কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সেনারা যুদ্ধ করেছে বলে রাশিয়া দাবি করে।
প্যারেডে ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা ও সার্বিয়াসহ ২৭ দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচের অংশগ্রহণের সমালোচনা করেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাস বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে কোনও ইইউ সদস্য বা প্রার্থী দেশ রাশিয়ার বিজয় দিবসে অংশ নেওয়া উচিত নয়।
প্যারেড উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও পুতিন দুই দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়। তবে তাইওয়ান দাবি করেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কমিউনিস্ট চীনের ভূমিকা ইতিহাসকে বিকৃত করছে। তাইওয়ানের মতে, যুদ্ধকালে চীনের প্রকৃত অবদান রেখেছিল সে সময়কার জাতীয়তাবাদী সরকার, যারা পরে তাইওয়ানে আশ্রয় নেয়।
Comments