
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অর্ধশতাধিকের বেশি আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২ মে) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও আনাদোলুর প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
চিকিৎসা সূত্রের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনভর গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র হামলা চালায়। শুক্রবার ভোরেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।
গাজা থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা স্থানীয়দের ভাষ্য তুলে ধরে বলেন, টানা ৬০ দিনের অবরোধ বেসামরিক মানুষের উপর ‘ইচ্ছাকৃত শ্বাসরোধ’ এর শামিল। এই অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন যে, গাজায় তাদের অভিযানের মূল লক্ষ্য যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি নয়, বরং ‘শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন’।
অন্যদিকে, তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৯১ জনেরও বেশি। শুধু বৃহস্পতিবারেই নতুন করে ৭৭ জন আহত ব্যক্তিকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এখনও বহু মানুষের মরদেহ ও আহত ব্যক্তি ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে পড়ে আছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এরপর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এর আগে, দীর্ঘ ১৫ মাসের সামরিক অভিযানের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ইসরায়েল। তবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে হামাসের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে আবারও আগ্রাসন শুরু করে তেল আবিব। এতে জানুয়ারিতে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যত ভেস্তে যায়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এছাড়া, ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
Comments