Image description

ভারতে সম্ভাব্য সামরিক হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, অঞ্চলটির ধর্ম বিষয়ক দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে এক হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই খবর নিশ্চিত করেছে।  সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক উত্তেজনার জেরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় এক ভয়াবহ সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। হামলার পরপরই ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। এই অভিযোগের পর থেকেই ইসলামাবাদে সামরিক হামলার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ফের উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই পেহেলগামের ঘটনার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যাতে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এই হামলায় তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। একইসঙ্গে দেশটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বুধবার সকালে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় হামলার আশঙ্কা রয়েছে।’ মন্ত্রীর এই মন্তব্য পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে।

এই হুমকির প্রেক্ষাপটেই পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ধর্ম বিষয়ক দপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। অঞ্চলজুড়ে থাকা মাদ্রাসাগুলো সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দপ্তরের প্রধান হাফিজ নজির আহমদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘আমরা কাশ্মীরের সমস্ত মাদ্রাসায় আগামী দশ দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছি।’ বিভাগের অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে জানান, সীমান্ত এলাকায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। সাম্প্রতিক ভয়াবহ উত্তেজনার জেরে সেখানকার বহু মানুষ নিজেদের সুরক্ষার জন্য মাটির নিচে বাংকার নির্মাণ করছেন। যাদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তারা সেই দুর্বল আশ্রয়গুলোকে সিমেন্ট দিয়ে আরও মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এলওসির নিকটবর্তী চাকোঠি এলাকার ৪৪ বছর বয়সী এক দোকানি ইফতেখার আহমদ মির এএফপিকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে।’