Image description

একটি স্ত্রী এডিস মশা যদি ফ্ল্যাভিভাইরাস প্যাথোজেন বহন করে এবং এ অবস্থায় কাউকে কামড় দেয় তাহলে ভুক্তভোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জয়েন্টে ব্যথা, রক্তক্ষরণ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন মনে করে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে মারা যায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর বিশ্বে ৪০ হাজার মানুষ এ রোগে মারা যেতে পারে। অন্যদিকে ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে ৩০ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত অঞ্চল হলো লাতিন আমেরিকা। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে সেখানে বছরে গড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে অঞ্চলটিতে ৪৬ লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। এদিকে ২০২৪ সালে এরই মধ্যে সেখানে প্রায় ৬০ লাখ কেস শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্রাজিলের মানুষ।

একদিকে যেমন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তেমনি অঞ্চল ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের সর্বত্র। এডিস মশা তাপমাত্রার ছোট পরিবর্তনের জন্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিসর প্রসারিত হচ্ছে। অ্যানেফিলিস মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়, যা এখন সারা বিশ্বেই পাওয়া যায়। কিন্তু এডিস এখনও সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু জলবায়ুর বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, এডিস মশা দক্ষিণ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে আরও দুইশ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

নগরায়ন এই মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। একটি ডেঙ্গু মশা তার দুই সপ্তাহের জীবনে একাধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পারে। কিছু স্থানে এই রোগ আগে ছিল না কিন্তু এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা এখন বাংলাদেশ ও ভারতে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ, আফ্রিকায় ডেঙ্গু আক্রান্তে সংখ্যা বেড়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য বিশ্বকে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। যদিও ধনী উত্তর গোলার্ধ ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তবে এতে বিশ্বের দরিদ্র অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিঙ্গাপুর দীর্ঘদিন ধরেই ভালো কাজ করেছে। দেশটি স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করছে। তাছাড়া কোথাও পানি জমেছে কি না তার খোঁজ করা, লার্ভা সংগ্রহ এবং দায়ীদের জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মশার কেন্দ্রস্থলগুলোতে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয়।

২০১৬ সাল থেকে সিঙ্গাপুর আরেকটি উচ্চ প্রযুক্তির ডেঙ্গু প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। প্রতি সপ্তাহে এটি ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত ৫০ লাখ মশা ছেড়ে দেয়, যা ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী ভাইরাস ছড়াতে বাধা দেয়। এতে বছরে দেশটির প্রায় ৩৫ লাখ ডলার খরচ হয়। এখনো ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি, তবে এক্ষেত্রে চেষ্টা চলছে।

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি