Image description

দুই সপ্তাহের অপেক্ষা শেষে আজ রোববার (২৮ মে) তুরস্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রান অফ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এদিন স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে, চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে আরও ৫ বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোগান থাকছেন কি না।
 
তবে প্রথম দফার মতো উত্তাপ নেই এবারের ভোটে। এদিকে ভোটারদের মনোভাব আর বিশ্লেষকদের মতামত বলছে, আবারও প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন এরদোগান। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরার।
 
তুরস্কে গত ১৪ মে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট পান এরদোগান। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলু পান ৪৪ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট। যেহেতু তাদের কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাননি, ফলে এ নির্বাচন রান অফে গড়ায়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা শনিবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রথম দফায় যেমনটা দেখা গিয়েছিল, এবার রান অফ নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে তেমন উত্তাপ লক্ষ করে যাচ্ছে না। যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট শাসন প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো (রান অফ) ভোট দিতে যাচ্ছেন দেশটির ভোটাররা।
 
ইস্তানবুুলের তোফানের ৪৯ বছর বয়সি বাসিন্দা সোনার ওগোরলু। তিনি বলছেন, ‘এ এক অন্যরকম অনুভূতি। আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন শেষ। তবে রোববার আরেকটি নির্বাচন আছে। আমি অবশ্যই ভোট দেব। কিন্তু বিষয়টি উদ্ভূত লাগছে, কারণ দুই সপ্তাহ আগে পরিবেশ যে রকম ছিল। সে তুলনায় সবকিছু বেশ শান্ত।’
 
আলজাজিরা জানাচ্ছে, ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগানই আবারও প্রেসিডেন্ট হবেন বলে দেশটির বেশিরভাগ ভোটার মনে করছেন। অথচ ১৪ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন এরদাগান হয়তো এবার হেরে যাবেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে কেমালের চেয়ে বেশি ভোট পান তিনি।
 
নির্বাচনের প্রথম ধাপে এরদোগানকে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ করতে না পারার বিষয়টি বিরোধীদলীয় সমর্থকদের জন্য বেশ বড় একটি ধাক্কা হিসেবে এসেছিল। এদের একটা বড় অংশ এখন বেশ হতাশ। তাদেরই একজন সিহাঙ্গিরের কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী ওলকে। আলজাজিরাকে তিনি বলেছেন, ১৪ মের আগে আমি অনেক আশাবাদী ছিলাম। সে অপ্রতিরোধ্য। এসব (অর্থনৈতিক) সমস্যায় সবাই বেশ ক্লান্ত। আবার উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেওয়ার বিষয়টি খুবই কঠিন হবে। কারণ মনে হচ্ছে বিষয়টি শেষ। কিন্তু আমি অবশ্যই ভোট দেব। এটি আমার দায়িত্ব।
 
জাতীয়তাবাদী গুড পার্টির তরুণ প্রচারক মেহতেপ বিবিসিকে বলেছেন, কেমালের অনুষ্ঠান ইউটিউবে তরুণদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। অনেক তরুণ ভোটার প্রথম দফায় ভোটকেন্দ্রে যাননি। এই ধাপে তারা নতুন করে ভাবছেন।
 
আঙ্কারার দক্ষিণ-পূর্বের বালা শহরে কাবাবের দোকান রয়েছে আল ওজদেমিরের। এরদোগানের দল একে পার্টির দফতরের সড়কে তার দোকান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আগেরবার এরদোগানকে ভোট দিয়েছি। এবারও দেব। আমি চাই, তিনি আবারও ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসুক।’
১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এরদোগান কার্যত বিশ্লেষক ও ভাষ্যকারদের অবাকই করে দেন। দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে তিনি ৫০ শতাংশের ‘বেড়া’ প্রায় টপকে যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় দফার ভোটে এবার বিরোধী কেমাল কিলিচদারওলুর মুখোমুখি হচ্ছেন এরদোগান। প্রথম দফা নির্বাচনের আগে অধিকাংশ জনমত জরিপ বলছিল, এরদোগানের দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। কিলিচদারওলুই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
 
তবে প্রত্যাশিত সেই ফলাফল না আসায় বিরোধীদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই নড়ে গেছে। বিরোধী প্রার্থীদের সমর্থকদের অনেকেই চুপসে গেছেন। এখন অবশ্য বিশ্লেষকরা জয়ের পথে এরদোগানকেই এগিয়ে রাখছেন। কেননা নির্বাচনের প্রথম পর্বে তৃতীয় হওয়া সিনান ওগান দ্বিতীয় পর্বের ভোটের আগে ক্ষমতাসীন রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোগানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এরদোগান এই সমর্থনের জন্য সিনানকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সিনানের সোমবারের ঘোষণা পিপলস অ্যালায়েন্সের প্রার্থী এরদোগানের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলুর চ্যালেঞ্জ আরও প্রকট করেছে।
 
ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সরকার সেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি বলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এ অবস্থায় এরদোগানের হাত থেকে ক্ষমতার রশি ফসকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে সব ধারণাকে মিথ্যে করে এরদোগান এখনও ৫০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে আছেন। এখনও এরদোগানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে, এটা সত্যিই বিরোধী ভোটারদের জন্য হতাশাজনক।
 
ইস্তানবুলের চিহানগির ডিস্ট্রিক্টের একটি কাপড়ের দোকানের মালিক ওলকে বলেন, ‘১৪ মে নির্বাচনের আগে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম যে, অবশেষে আমরা তার (এরদোগান) কবল থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তাকে হটানো সম্ভব নয়।’
 
৩৪ বছর বয়সি এই নারী তার পুরো নাম প্রকাশে রাজি হননি। প্রত্যেকেই এই লড়াই (এরদোগানকে হটানো) করতে করতে ক্লান্ত-এমন মন্তব্য করে ওলকে বলেন, ‘আবার পূর্ণ উদ্যমে ভোট দেওয়া কঠিন, কেননা সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, সব নির্ধারিতই হয়ে গেছে। তবে আমি অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে যাব, কারণ এটা আমার দায়িত্ব।’
 
বিরোধীদের মনোবল ভেঙে পড়া অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করেন ইস্তানবুলের সাবানচি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক বার্ক এসেন। তার কথায়, চলমান আর্থিক সংকট ও ভূমিকম্পের পর সরকারের অবহেলা সত্ত্বেও এরদোগান এখনও ৫০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে আছেন। এখনও এরদোগানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে, এটা সত্যিই বিরোধী ভোটারদের জন্য হতাশাজনক।