Image description

হেভি মেটাল সঙ্গীতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী নাম, কিংবদন্তি গায়ক ওজি ওসবার্ন ৭৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে রক এবং মেটাল সঙ্গীতের অনুরাগীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ নামে পরিচিত ওসবার্ন ছিলেন বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথের প্রধান কণ্ঠশিল্পী। তাঁর হাত ধরেই 'আয়রন ম্যান' ও 'প্যারানয়েড'-এর মতো কালজয়ী গানগুলো জন্ম নিয়েছিল, যা হেভি মেটাল ঘরানাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। মৃত্যুর মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই তিনি নিজের শহর বার্মিংহামে তাঁর জীবনের শেষ কনসার্টে গান গেয়েছিলেন। সেই মঞ্চে মেটালিকা, গানস এন’রোজেস-সহ তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত বহু রক ব্যান্ডের কিংবদন্তি শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন।

ওসবার্নের পরিবার এক বিবৃতিতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেছে, "এই খবর জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ওজি ওসবার্ন আজ (মঙ্গলবার) সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি ছিলেন ভালোবাসায় ঘেরা।"

যদিও ওসবার্নের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করা হয়নি, তবে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁর পারকিনসন রোগ ধরা পড়েছিল।

 তার আসল নাম জন মাইকেল ওসবার্ন। ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে বিভিন্ন অস্থায়ী কাজ করেন এবং একসময় চুরি করে জেলেও ছিলেন। এরপরই তিনি সঙ্গীতের জগতে আসেন। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি গিটারিস্ট টনি ইয়োমি, বেসিস্ট গিজার বাটলার ও ড্রামার বিল ওয়ার্ডের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন কালজয়ী ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথ। তাঁদের ব্লুজ-ঘেঁষা অথচ ভারী, ধীর ও গা ছমছমে সঙ্গীত হেভি মেটালের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ১৯৭০ সালে ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম 'ব্ল্যাক সাবাথ' মুক্তি পায়, এরপর একে একে আসে 'প্যারানয়েড' ও 'মাস্টার অব রিয়েলিটি'-এর মতো বহু প্ল্যাটিনাম হিট অ্যালবাম।

১৯৭৮ সালে ব্ল্যাক সাবাথ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর ওসবার্ন একক ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৮০ সালে তাঁর 'ব্লিজার্ড অব অজ' অ্যালবাম মুক্তি পায়, যেখানে ছিল বিখ্যাত গান 'ক্রেজি ট্রেইন'। পরের বছর 'ডায়েরি অব আ ম্যাডম্যান' ৫০ লাখ কপির বেশি বিক্রি হয়।

মঞ্চে ওসবার্নের উন্মত্ত আচরণ ছিল কিংবদন্তীতুল্য। একটি কনসার্টে ভুল করে একটি জীবন্ত বাদুড়ের মাথা কামড়ে দেওয়ার ঘটনাটি ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। মাদকসেবন ও মদ্যপানের আসক্তির কারণে তিনি নানা বিতর্কেও জড়িয়েছেন। ১৯৮৯ সালে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যারনকে খুনের চেষ্টা করার অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং আদালতের নির্দেশে ছয় মাস পুনর্বাসনে কাটাতে হয় তাঁকে।

২০০০-এর দশকে এমটিভির রিয়েলিটি শো 'দ্য ওসবার্নারস'-এ ওসবার্নকে এক ভিন্ন রূপে দেখা যায়। তিনি বলেছিলেন, “মঞ্চে আমি যা করি, সেটা শুধু একটা অভিনয়। আমি আসলে একান্তেই পারিবারিক মানুষ।”

২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার পর বেশিরভাগ সময়ই মঞ্চ থেকে দূরে ছিলেন ওসবার্ন। ২০২০ সালে তিনি পারকিনসনে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানান। এরপরও তিনি একটি বিদায়ী কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন। গত ৫ জুলাই বার্মিংহামের ভিলা পার্ক স্টেডিয়ামে তিনি শেষবারের মতো তাঁর প্রিয় গানগুলো গেয়েছিলেন।

ওসবার্নের মৃত্যুর খবরে রোলিং স্টোনসের রোনি উড, মেটালিকা, ভ্যান হ্যালেনের স্যামি হ্যাগার, কুইনের ব্রায়ান মে, এলটন জন এবং গ্রিন ডের বিলি জো-এর মতো বহু তারকা শোক প্রকাশ করেছেন। এলটন জন বলেছেন, “ওজি ছিলেন আমার প্রিয় বন্ধু এবং রক সংগীতের পথিকৃৎ। তিনি থাকবেন গানের দেবতাদের অমর তালিকায়।”

ওসবার্ন তাঁর স্ত্রী শ্যারন, তাঁদের সন্তান অ্যাইমি, কেলি ও জ্যাক এবং নাতি-নাতনিদের রেখে গেছেন। তাঁর আগের সংসারের সন্তান জেসিকা, লুইস ও এলিয়টও রয়েছেন।