
জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া দেশের ভবিষ্যৎ ও নাগরিকদের মানসিকতা নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে লাগাতার সমালোচনা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপবাদের শিকার হয়ে বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় এক দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, "আমি আর আমার নিজ দেশের কাছে কোনো প্রত্যাশা রাখি না।"
ফারিয়া তার স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন, "বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সব মানুষ টাকার (ডলারও পড়তে পারেন) কাছে তাদের এথিক্স বিক্রি করে না। সবাই স্রোতের সঙ্গে ভেসে যায় না, অনেকে রিস্ক নেয়, প্রতিবাদ করে। আমি সেসবেরই চেষ্টা করেছিলাম।"
জুলাইয়ের আন্দোলনের সময়কার একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে ফারিয়া জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন যখন কিছু সেলিব্রিটিকে মেট্রোরেল বা বিটিভিতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ভিডিও বানানোর জন্য বলা হয়েছিল, তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। প্রথমে সরাসরি 'না' বলতে পারেননি, তবে অভিনেতা সিয়ামের 'না' বলার খবর শুনে তিনি সাহস পান এবং নিজেও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্পষ্ট করেন, এই ঘটনা প্রকাশ করার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন সামাজিক মাধ্যমে 'ডলার খেয়ে ভিডিও বানায়নি' এমন মিথ্যা প্রচার শুরু হয়, তখন তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বাধ্য হন।
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করে ফারিয়া লিখেছেন, "জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ। যত আন্দোলন হোক, সরকার পরিবর্তন হোক, কেউ দুর্নীতি থামাতে পারবে না। যে-ই ক্ষমতা পায়, সেই-ই তার অপব্যবহার করে।" তিনি আরও বলেন, "আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা আওয়ামী লীগকে মন থেকে ভালোবাসে, কিন্তু জুলাইয়ে প্রতিবাদ করেছিল। সেসময় যদি আপনি মানুষ হন, তাহলে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেন না, রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন।"
শবনম ফারিয়া তার এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কোনো পোস্ট বা মন্তব্য না করার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে এটিই আমার শেষ স্ট্যাটাস। কারণ আমি বুঝে গেছি এই জাতির কিছুই হবে না।"
স্ট্যাটাসের শেষে খানিকটা ব্যঙ্গাত্মক সুরে ফারিয়া যোগ করেছেন, "সত্যি সত্যি ডলার পেলে আসলে ভালোই লাগতো। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ২৫,৩০০ টাকা দিয়ে ২০০ ডলার পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে খুবই কষ্ট হইছে।"
শবনম ফারিয়ার এই খোলামেলা ফেসবুক স্ট্যাটাস ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার সাহসিকতার প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ তার হতাশাব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনাও করছেন।
Comments