Image description

দেশে আলোচনায় এখন সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই অস্থিরতা, তখনই প্রশ্ন উঠেছে সংসদ নির্বাচন কতদূর? দেশের মানুষ সবকিছুর স্থিরতা চাচ্ছেন- তাই এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এসব নিয়ে বারবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে তারা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গত রবিবার যমুনায় দুই দফায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নিয়ে কোনো বিষয়েই একমত হতে পারেননি নেতারা। কেউ চাইছেন দ্রুত নির্বাচন দেয়া হোক, আবার কেউ চাইছেন সংস্কার কাজ এগিয়ে চলুক। দুই দফায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নিয়ে কোনো বিষয়েই একমত হতে পারেননি নেতারা। কেউ চাইছেন দ্রুত নির্বাচন দেয়া হোক, আবার কেউ চাইছেন সংস্কার কাজ এগিয়ে চলুক। 

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে-‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়’- এই প্রবাদ বাক্যটি পালন করার সময় এসেছে। বর্তমানে সে অবস্থায় আমাদের দেশ দাঁড়িয়ে আছে, কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব নয়, এক হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক সব দলের লক্ষ্য এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁদের বক্তব্য শুনে এমনই মনে হয়, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এমন দেশের সংকট মুহূর্তেও তারা একমত হতে পারছে না। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা আগে থেকেই চাচ্ছে। তবে ধোঁয়াশা কাটতে শুরু করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বিশ্লেষকরা। দেশে বর্তমান অস্থির সময় বিরাজ করছে। এখান থেকে উত্তরণ করা জরুরি। 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। নির্বাচন না হলে দেশের সংকট-অনিশ্চয়তা কাটবে না। সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া। তবে সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় কিনা। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। সেজন্য প্রথমত, প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। পরে সেই সংস্কার অনুমোদন করা হবে। তাই নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোন পথে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়- দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী আগে নির্বাচন পরে সংস্কার করা উচিত। 

প্রশ্ন হচ্ছে- বর্তমান সরকার কি সহসায় নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? দুঃখজনক হলেও সত্য সংস্কার বা নির্বাচন কোনো কিছুরই দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং আদর্শের বিরোধ গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রত্যাশার তালিকায় যে প্রসঙ্গগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে প্রথমেই আসবে নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জনগণের প্রধান প্রত্যাশা, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সময়ের দাবি। দেশে নির্বাচন অবশ্যই জরুরি, তবে তাড়াহুড়ো করে নয়। মৌলিক সংস্কারের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে- এমন মতামতও দিয়েছেন অনেকে। তাই সব বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। নতুন সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা, তারা অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেবে। জনগণের কথা ভেবে নিকট অতীতের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে অবাধে ভোট দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই- সুস্থ, সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের চাওয়া, সরকার সময়ক্ষেপণ না করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।