Image description

ক্রমশই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। সারাদেশের চিত্র প্রায় একই। বিশেষজ্ঞরা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামার কারণ হিসেবে পরিবেশ বিপর্যয়কে দায়ী করছেন।

তারা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, ইত্যাদির বিরূপ প্রভাবের কারণেই দেশে পানির সমস্যা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের একুশ শতাংশের বেশি ভূমি পানির নিচে স্থায়ীভাবে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা ওয়াসাসহ সকল নগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদী বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি মাস্টার প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মত দেন তারা। এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলও মহাসংকটে। উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার এবং ভূগর্ভে পানির প্রবেশ ব্যাহত হওয়ায় পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। অনেক এলাকায় নলকূপে পানি উঠছে না। বিপুলসংখ্যক গভীর নলকূপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে দিন-রাত অবিরাম পানি তোলা হচ্ছে।

অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলেও স্বাদু বা মিঠা পানির অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মানুষ বাধ্য হয়ে ক্ষতিকর পর্যায়ে থাকা নোনা পানি পান করছে। ভূগর্ভেও নোনা পানির অনুপ্রবেশ বাড়ছে। ফসল, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লবণ শরীরে প্রবেশ করায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। এ বিষয়ে পরিবেশবিদ ও দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীপতি সিকদার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একটা সময় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার এত পরিমাণে ছিল না। সেচকাজের জন্য পানি পাওয়া যেত খাল-বিল আর নদী-নালা থেকে। এখন তা পাওয়া যায় না। কৃষিকাজ বেড়েছে। সেচ ছাড়া কৃষি চিন্তাই করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিও হয়েছে অনিয়মিত। গাছপালা কমেছে, তাপমাত্রা বেড়েছে। সব ঠিকঠাকমতো না হওয়ায় পানির প্রাপ্যতা কমে গেছে। একই কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। যেখান থেকে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হয়, তখন সে জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়। আবার যখন ওপর থেকে পানি পড়ে, অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে ফাঁকা জায়গাটা পূরণ হয়ে যায়।

এ ব্যবস্থায় যদি অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, অর্থাৎ বেশি পানি তোলা হয় আর কম পানি জমা হয়, সে ক্ষেত্রে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা জরুরি। জাতিসংঘের চালানো এক সমীক্ষা হতে দেখা যায়, অধিক পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে শীর্ষে থাকা দেশের তালিকায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১০টি দেশ স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং গবেষকরা বেশ কয়েক দশক পূর্বেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় শঙ্কার কালোমেঘ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে সবার মাঝে। কৃষিকাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়িয়ে শুধু পানীয় পানি ভূগর্ভ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয়গুলো দখল নয়, বরং সংস্কার করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের বিষয়ে আইনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সম্বন্ধে জনসচেতনা বৃদ্ধির বিষয়টিও ভাবতে হবে বলে আমরা মনে করি।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস