
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মোট ১০টি সভা করেছে। এসব সভায় সারা দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। এই উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেকই ব্যয় হবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের জন্য।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর গত ২৪ মে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছে ১০তম একনেক সভা। এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ৫০ হাজার ৭৭ কোটি টাকার ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক, যার মধ্যে রয়েছে মেগা প্রকল্পও। প্রকল্পগুলো বৈদেশিক ঋণনির্ভর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের নাগরিক সমস্যার পাশাপাশি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সমস্যা সমাধানে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের নাগরিক দুর্ভোগ যেমন দূর হবে, নগর-পরিকল্পনার ঘাটতি এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাও অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা দেশের স্বার্থেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় প্রতিটি একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো মেগা প্রকল্প নেবে না। তবে বাস্তব চিত্র হলো, এরই মধ্যে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক দুটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। এর একটি হলো চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম সড়কসেতু নির্মাণ প্রকল্প। ইউনূস সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভায় অনুমোদিত এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। একনেকের অষ্টম সভায় চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প ও ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টালী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর গড়তে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বিগত সরকার। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে চট্টগ্রামের বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা বলছি, মেগা প্রকল্প নিচ্ছি না, তবু দেশের স্বার্থে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এগুলো খুব বড় প্রকল্প নয়। তালিকায় অনেক মেগা প্রকল্প ছিল, সেগুলো নিচ্ছি না।’
Comments