Image description

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অস্থিরতার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে গতি কমেছে, যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে বেকারত্ব বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়ন এবং রাজস্ব খাত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ২৬ লাখ ৬০ হাজার কর্মক্ষম মানুষ বেকার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দরিদ্র ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, দুর্বল শ্রমবাজারের কারণে দারিদ্র্যের হার ২২.৯ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

অর্থনৈতিক কার্যক্রমের এই শ্লথগতি মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে জোর দেওয়ার কথা বললেও, প্রস্তাবিত বাজেটে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব দেখছেন তারা।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, "এখনও মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বেশি। আমরা যদি বিনিয়োগ বাড়াতে পারি, এটাকে প্রণোদিত করতে পারি, কর্মসংস্থান করতে পারি তাহলে মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি। ক্রয় ক্ষমতাটা তখন আমরা ধরে রাখতে পারব।"

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমদানি ও অন্যান্য শুল্ক, ভ্যাটে চাপ বাড়ানো হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, বাজেটে করজাল বাড়ানোর কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেই। তাদের মতে, কর বৈষম্যের কারণে এই বাজেট বিনিয়োগ সহায়ক নয়।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, "অর্থনীতিকে বেগবান করার জন্য এটা কি একটি সাপোর্টিভ বাজেট হয়েছে? আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাচ্ছি, সাপোর্টিভ কোনো কিছু এই বাজেটে আমরা দেখতে পাইনি।"

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার দেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমাদের দেশে এফডিআই জিডিপির মাত্র ০.৬ শতাংশ। এটা পাকিস্তানের চেয়েও কম এবং ৪০-৪৫ বছর ধরেই কম। এমন নয় যে গত ২ বা ৩ বছরে কমেছে। আপনি দেখবেন, পাকিস্তানের মতো ইকোনমিতে আমাদের চেয়ে বেশি এফডিআই। এটাই কঠিন সত্য। ভিয়েতনামের কথা বললে বলতে হবে, ওখানে এটা কয়েকগুণ বেশি। সুতরাং, স্ট্রাকচারালি আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।"

২০২৪ সালে দেশে মোট এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩.২৫ শতাংশ কম। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি টানা ছয় মাস ধরে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে, যা বিনিয়োগ স্থবিরতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।