
রাজনৈতিক সরকারের মতোই অন্তর্বর্তী সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় (কালোটাকা) বৈধ করার সুযোগ রাখায় কড়া সমালোচনা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ ধরনের পদক্ষেপ জুলাই আন্দোলনের বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি। মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এই মন্তব্য করেন।
ড. ফাহমিদা বলেন, "বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। তাতে যারা নিয়মিত নৈতিকভাবে কর দেন, তাদের নৈতিকতাতে আঘাত করা হয়েছে। এতে বৈধ পথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি রাজস্ব আয় হবে বলেও মনে হয় না।"
তিনি আরও বলেন, "আয়কর আইন-২০২৩ এর প্রথম তফসিলের আওতায় যেকোনো ব্যক্তি আবাসন বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে নির্ধারিত বিশেষ কর দিয়ে অঘোষিত তহবিলকে বৈধতা দিতে পারেন। এই সুবিধা গ্রহণের জন্য করের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু সিপিডি সবসময় অঘোষিত অর্থ বৈধ করার এই সুযোগের বিরুদ্ধে। এই সুবিধা সৎ করদাতাদের জন্য নিরুৎসাহিত করে। কর কর্তৃপক্ষের কর আইন ও বিধি প্রয়োগের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।"
ফাহমিদা বলেন, "অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধ আয় ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ সাধারণ জনগণের কাছে কেবল ভুল সংকেত পাঠাতে পারে। এটি জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থি।"
তিনি আরও বলেন, "কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যের হাতিয়ার। এ ধরনের সুবিধা বৈধভাবে আয় করা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এটা বৈষম্য। যা জুলাই আন্দোলনের যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করি।"
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক বাজেটের সামগ্রিক কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, "কিছু কিছু পদক্ষেপ ভালো নেওয়া হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যে একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম—এ রকম করে নেওয়া হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "বাজেটের যে দর্শন, সেখানে বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।"
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেটে বলা হয়েছে, কেউ চাইলে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে নিজের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে পারবেন। তবে এবারের বাজেটে আগের তুলনায় বেশি হারে কর দিতে হবে।
Comments